বাজারের কম্বলে সব শীত ঢাকা যায় না
আবহাওয়াবিজ্ঞানীরা পূর্বাভাস দিচ্ছেন, এবার নাকি শীত তেমন কনকনে হবে না। আবহাওয়া অফিসের লোকজন অনেক আঁকিবুকি কষে শীত নিয়ে যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, তা অবশ্য অনেক আগেই খনা বলে গেছেন। প্রায় হাজার–বারো শ বছর আগে জিব কেটে দেওয়া এক মহীয়সী নারী খনা বলেছিলেন, ‘ঊন বর্ষায় দুনো শীত’ আর ‘দুনো বর্ষায় ঊন শীত’।
মনে করা হয়, ৮০০ থেকে ১২০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে তাঁর আবির্ভাব হয়েছিল। কিংবদন্তি অনুসারে, তিনি বাস করতেন পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বারাসাত মহকুমার বেড়াচাঁপার দেউলিয়া গ্রামে (বর্তমান চন্দ্রকেতুগড় প্রত্নস্থল, যেটি খনামিহিরের ঢিবি নামে পরিচিত)।
খনা বলেছিলেন, বড় বর্ষা হলে শীত কম হয় আর বর্ষা কম হলে শীত কড়া হয়। এবার আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে সারা দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়ের (খনা অবশ্য ঘটা করে নাম রাখা কার্তিকের এসব ঝড়বৃষ্টিকে কাইতান বলেই সম্বোধন করতেন) সঙ্গে আসা জলীয় বাষ্পের কারণে বেড়েছে উষ্ণতা। তাই শীত কম পড়তে পারে।
গত বছরও শীত তেমন জমকালো হয়নি। গত বছরের ২০ জানুয়ারি দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। কিন্তু পরের মাসে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতে তাপমাত্রা উঠেছিল ৩৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। গত বছর শীতকালে তাপমাত্রার গড় স্বাভাবিকের চেয়ে ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। তবে এবার শীতকালে উষ্ণতা গত বছরের চেয়ে বেশি থাকতে পারে। গত ১২ নভেম্বর রাজধানীর একটি তারকা হোটেলে দেশের নেতৃস্থানীয় আবহাওয়াবিদেরা এবার শীত কেমন হবে—সে বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে এসব তথ্য উল্লেখ করেছেন।
আমরা দেখছি, ঘূর্ণিঝড়ের হাঁকডাক নিয়ে ছুটে আসা দু–দুটো ‘কাইতান’–এর (কার্তিকের ঝড়বাদল) পরেও শীত ঝেড়ে কাশেনি। চাদর কম্বলের বিক্রিবাট্টাও বাড়েনি। শীত এলেই চারদিকে কম্বল কম্বল রব পড়ে যায়। কোন সংস্থা কাকে কত কম্বল দিয়ে সামাজিক দায়িত্ব পালন করল, তার একটা নিকাশ চলে। খবর ছাপা হতে থাকে কম্বল নিয়ে কে মেয়র, মন্ত্রী কিংবা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেন। কাগজের পাতায় আবার কেউ প্রশ্ন করেন, কেন দিতে দেরি হলো? সংবাদের শিরোনাম হয়, ‘কোথায় গেল আমার কম্বল’ অথবা ‘কালোবাজারে সাদা কম্বল!’