বিজয়ের মাস এবং বাংলাদেশের সমৃদ্ধ অর্থনীতির ইতিহাস
আশার প্রদীপের নিচে বড় হচ্ছে এক অকৃতজ্ঞ প্রজন্ম যারা নিজেদের অর্জিত স্বাধীনতা নিয়ে ব্যঙ্গ করে, উন্নয়ন নিয়ে ব্যঙ্গ করে। অথচ কবির ভাষায় যদি বলি- ‘যে সব বঙ্গেতে জন্মে হিংসে বঙ্গবাণী, সেই সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।’ কিংবা ‘নিজ দেশ ছাড়ি কেন বিদেশ ন যায়’/ ‘আজও আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই, জাতির পতাকা খামছে ধরেছে সেই পুরনো শকুন।’- ইত্যাদি অসংখ্য কবিতায় কবিরা একশ্রেণির নষ্ট প্রজন্মকে চিহ্নিত করেছেন যারা নিজে দেশের প্রতিটি ভালো জিনিসকে, অর্জনকে অপমানিত করে। কবিতার লাইনে লাইনে নিহিত আছে নিজ দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ভাষাকে কটাক্ষ করা ঘৃণিত প্রজন্মের কথা।
মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের সন্তানের সংখ্যা আজ এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে তারা আজ মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের চেয়েও যেন সংখ্যাধিক্য। পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল এক ঘটনা হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যেখানে নিজ দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের বিরোধী অপশক্তি আছে যারা এখনো দেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি অথচ তারা এদেশের আলো বাতাসে বড় হচ্ছে, দেশের উন্নয়নের সুফল ভোগ করছে।
এই ভ্রান্তপ্রজন্ম এবং তাদের পিতা-মাতারা এখনো পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করে এবং আমাদের স্বাধীনতা লাভে যে প্রতিবেশী ভারতের মানুষ জীবন দিয়েছে সুযোগ পেলেই তাদের প্রতিও চরম বিদ্বেষ পোষণ করে। আমি সেই বিপথগামী প্রজন্মকে বলব তারা যেন তাদের পিতা-মাতাকে জিজ্ঞাস করে- তাদের জন্মের পূর্বে তাদের পিতা-মাতারা কেমন বাংলাদেশে বসবাস করত--তবেই জানবে জাতির ক্রমোন্নতির ইতিহাস!
এই বাংলার মানুষ সন্ধ্যায় কুপি বাতি জ্বালাতে পারত না, শহরেও হারিকেন লণ্ঠনের নিভু নিভু আলো জ্বলত, দেশের মানুষের তিনবেলা আহার জুটত না,পায়ে জুতা ছিল না, কাঠের খড়ম ছিল পায়ে, খোলা পায়খানা ব্যবহার করতো, একটা কাপড় সারা গাঁয়ে হাত বদল হতো, বিয়ে বাড়িতে কলা গাছ পুঁতে গেট সাজাতো। পালকি চড়ে বর যেত বিয়ে বাড়িতে, দোচালা কুঁড়েঘর ছিল, পাটকাঠির বেড়া ছিল, রাস্তাঘাট ব্রিজ কালভার্ট ছিল না, ছিল না তেমন স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মাদরাসা।
মাইক ছিল না, কলের গান ছিল কতিপয় ঘরে। রেড়িও ছিল দু-তিন পাড়া পরপর। লুমিনা ব্যাটারি দিয়ে চলা রেডিওতে বয়লা ঘুরাতো ঘর্মাক্ত শরীরে, টেলিভিশন তো দূরের কথা, লুঙ্গি গামছা পরে খালি গায়ে ঘুরে বেড়াতো। একসময় তারা গরুর গাড়িতে চড়তো, ছিল না কোনো এমবিবিএস ডাক্তার, কয়েক গ্রাম মিলে একটা হাতুড়ে ডাক্তার ছিল- সফদার ডাক্তার মাথা ভরা টাক তার বলা হতো। শিশু জন্মালেই মা-শিশু মারা যেত ধনুষ্টঙ্কারে। কলেরা, যক্ষ্মা, পেটের অসুখ ছিল তাদের নিত্যসঙ্গী।