বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার ও করণীয়
সাম্প্রতিক সময়ে বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার আশঙ্কাজনক হারে পরিলক্ষিত হচ্ছে। অনেকেই রাজনৈতিক অথবা সামাজিক অনুষ্ঠানে বৈধ অস্ত্র প্রদর্শন করছে, যা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। বৈধ অস্ত্র ঠেকিয়ে ভয়ভীতি দেখানো, নিজ স্বার্থ হাসিল, আধিপত্য বিস্তার এমনকি হত্যার মতো ঘটনাও সংঘটিত হচ্ছে। এমনকি রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে অস্ত্র প্রদর্শন করে বিরোধী পক্ষকে হুমকি দিতে দেখা যায়। যা অস্ত্র আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশে বৈধ-অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে। বৈধ-অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে নির্বাচনকালীন যেন কোনো ধরনের নাশকতামূূলক কর্মকা- ঘটাতে না পারে সে লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করতে হয়। সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ‘দেশে বৈধ লাইসেন্সপ্রাপ্ত অস্ত্র রয়েছে ৫০,৩১০টি। এর মধ্যে ব্যক্তির নামে ৪৫,২২৬টি এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ৫,০৮৪টি। এসব বৈধ অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে একনালা, দোনালা বন্দুক, শর্ট গান, পিস্তল, রিভলবার ও রাইফেল। এসব অস্ত্র ব্যবহারকারীদের মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এমনকি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীও রয়েছে।
আগ্নেয়াস্ত্র নীতিমালা, লাইসেন্সপ্রাপ্তির যোগ্যতা ও অযোগ্যতা
‘আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ ব্যবহার সংক্রান্তে সর্বপ্রথম ১৮৭৮ সালে অস্ত্র আইন প্রণীত হয়। পরবর্তী সময় ১৯২৪ সালে ভারত উপমহাদেশে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার সংক্রান্তে বিধিমালা প্রণয়ন করা হয় এবং বাংলাদেশে ২০১৬ সালে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, গ্রহণ, ক্রয়-বিক্রয়, ব্যবহার, সংরক্ষণ, হস্তান্তর সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রজ্ঞাপন, সার্কুলার ও অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। ‘আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা, ২০১৬ অনুসারে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সপ্রাপ্তির জন্য আবেদনকারীকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। আবেদনকারীর বয়স ৩০-৭০ বছর এবং তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সামর্থ্যবান হতে হবে। আবেদনকারীকে ব্যক্তি শ্রেণির আয়করদাতা হতে হবে। কারও বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা বিচারাধীন থাকলে অথবা কোনো মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হলে দশ বছরের মধ্যে তিনি লাইসেন্স পাবেন না।
আগ্নেয়াস্ত্র বহন, লাইসেন্স বাতিল ও হারালে করণীয়
কোনো ব্যক্তি স্বীয় লাইসেন্সে এন্ট্রিকৃত অস্ত্র আত্মরক্ষার নিমিত্তে নিজে বহন বা ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু অন্যকে ভয়ভীতি দেখানোর জন্য অস্ত্র প্রদর্শন করতে পারবেন না। আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সধারী কোনো ব্যক্তি অন্য কারও নিরাপত্তা বা সম্পত্তি রক্ষার জন্য অস্ত্রধারী প্রহরী হিসেবে নিয়োজিত হলে তার অস্ত্রের লাইসেন্স তাৎক্ষণিকভাবে বাতিলের বিধান রয়েছে। আগেয়াস্ত্রের লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোনো প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হলে বা বিলুপ্ত হয়ে গেলে প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী অথবা নির্বাহী প্রধান নিকটস্থ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আগেয়াস্ত্র জমা দেবেন। আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের শর্তগুলো যথাযথভাবে প্রতিপালন না করলে বা অন্য কোনো যৌক্তিক কারণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে কোনো লাইসেন্স বাতিল করতে পারেন। আগ্নেয়াস্ত্র বহনকালে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স সঙ্গে রাখতে হয়। লাইসেন্সকৃত আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে অন্য থানা এলাকায় গেলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট থানাকে পূর্বে জানাতে হয়।
- ট্যাগ:
- মতামত
- লাইসেন্স
- আগ্নেয়াস্ত্র
- অবৈধ অস্ত্র