আমাদের ফোনে যান্ত্রিক মা
বাসায় থাকতে আমি অনেক কিছুই ভয় পেতাম। তবে বাসা থেকে হলে চলে আসার পর আমি এখন যে জিনিসটাকে সবচেয়ে বেশি ভয় পাই, সেটা হলো অসময়ে বেজে ওঠা মুঠোফোনের রিংটোন।
হলে আসার পর সাধারণত সবারই সবকিছুর টাইম টেবিলটা এলোমেলো হয়ে যায়। খাওয়া ও ঘুমের ঠিক থাকে না, ঠিক থাকে না বিশ্রাম বা পরিশ্রমেরও। তারুণ্যের গৌরবে আমরা যখন আমাদের দেহঘড়িকেও অস্বীকার করে বসার সাহস দেখাই, এত এত অনিয়মের মধ্যেও একটা নিয়ম কিন্তু একদম ঠিক থাকে, সেটা হলো রাতের বেলা মা বা বাবার ছোট্ট একটা ফোন কল।
এই ফোন কলটাই হয়ে ওঠে ফেলে আসা পরিবারের সঙ্গে আমাদের থেকে যাওয়ার একমাত্র যোগসূত্র। সারা দিন কী খেয়েছি তার মেনু যেমন আমাদের পুঙ্খানুপুঙ্খ মায়েদের বুঝিয়ে দিতে হয়, তেমনি দিতে হয় এমন আবহাওয়ায় ভোররাতে ফ্যানটা বন্ধ করে কাঁথাটা গায়ের ওপর টেনে দিয়েছি কি না বা ক্লাসে যাওয়ার আগে সকালের নাশতা খেয়েছি কি না, সেই কৈফিয়তও।
এই রাতের ফোনটা আমাদের সবার কাছেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ, অনেক বেশি আকাঙ্ক্ষার। এমনকি সবকিছু ছেড়ে বোহেমিয়ান জীবন কাটানো ছেলেটাও মায়ের এই কলটার জন্য মনে মনে অপেক্ষা করে থাকে। ফোন এলে হয়তো ধরে বিরক্তি দেখায়, তবে কলটা না এলে মনের অগোচরেই মন খারাপ হয়। মনে হয়, সারাটা দিন ফাঁকা, ফাঁকা, কী যেন নেই।
কিন্তু এ ফোনটা যদি রাতে না বেজে সকালে বাজে বা দুপুরে বেজে ওঠে, তখনই ধুকপুক করতে থাকে আমাদের বুক। আমাদের মনে চেপে বসে বাবার হার্টের অসুখ, মায়ের করুণ মুখ। কোনো বিপদ হলো না তো?