শ্রমিক আন্দোলনের রাজনীতি ও নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারি
যুক্তরাষ্ট্রর নতুন ঘোষণা, শ্রমিক অধিকার হরণ হলে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করার প্রত্যয় নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত ১৬ নভেম্বর প্রথমবারের মতো একটি মেমোরেন্ডামে স্বাক্ষর করেছেন। বিষয়টিকে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছে হোয়াইট হাউজ। এ মেমোরেন্ডাম স্বাক্ষরের পরে সানফ্রান্সিসকোর একটি হোটেলে শ্রমিক নেতাদের সামনে এর বিস্তারিত তুলে ধরেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। তিনি জানিয়েছেন, বিশ্বজুড়ে যারা শ্রমিক অধিকার হরণ করবে, শ্রমিকদের ভয়ভীতি দেখাবে এবং আক্রমণ করবে তাদের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞাসহ নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেবে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেন, যারা শ্রম ইউনিয়নের নেতা, শ্রম অধিকারের পক্ষে কাজ করা ব্যক্তি এবং শ্রম সংগঠনের ওপর আক্রমণ করবে তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা, বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা এবং ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। এ সময় ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার কর্মী কল্পনা আক্তারের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা কল্পনা আক্তারের মতো মানুষদের পাশে থাকতে চাই। তিনি এখনো জীবিত আছেন, কারণ আমেরিকার দূতাবাস তার পক্ষে কাজ করেছে।’
এরই প্রেক্ষাপটে গত ২০ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়, মেমোরেন্ডামে শ্রম অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যেসব উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে, এর পেছনে রাজনীতি রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই এর ব্যবহার করতে পারে। শ্রম অধিকারের লঙ্ঘন হয়েছে মনে করলে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কিংবা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার সুযোগ রয়েছে। এর প্রভাব বাংলাদেশের পোশাক খাতের ওপর পড়তে পারে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলা হয় চিঠিতে। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নীতি দুশ্চিন্তায় ফেলেছে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের। বিশেষ করে পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের। কারণ শ্রম অধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নতুন নীতিটি বাংলাদেশের ওপর কার্যকর করলে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এ দেশের রপ্তানি খাতে।
শ্রম অধিকার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের ঘোষণা এমন এক সময়ে এসেছে, যখন বাংলাদেশে পোশাক খাতে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করেছে সরকার এবং এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ আছে। আবার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি কার্যকর করেছে। এই পরিস্থিতিতে শ্রম অধিকারবিষয়ক নতুন এ নীতি রপ্তানিকারকদের দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
দেশের রপ্তানিকারকদের বড় দুশ্চিন্তার কারণ হলো, এ দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির বড় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে পোশাক রপ্তানিতে তৃতীয় শীর্ষ দেশ বাংলাদেশ। পোশাক ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত মৎস্য, চামড়াজাত পণ্য, প্লাস্টিক পণ্যসহ নানা ধরনের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। এমনিতেই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চলতি বছর পোশাক রপ্তানি কিছুটা নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই থেকে অক্টোবর এ চার মাসে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ শতাংশের বেশি কমেছে। তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে মোট ৯৭০ কোটি মার্কিন ডলারের বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যার মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮৫১ কোটি ডলার।
- ট্যাগ:
- মতামত
- তৈরি পোশাক শিল্প
- শ্রম অধিকার