হরতাল-অবরোধের অস্ত্র ভোঁতা হয়ে গেছে
অঘ্রানের শুরুতেই শীতের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। শহরে অতটা না বোঝা গেলেও গ্রামে টের পাওয়া যায়। আর কে না জানে, এ দেশে শীত হলো আন্দোলনের মৌসুম। কয়েক দশক ধরেই এটা দেখে আসছি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নির্বাচনী হাওয়া। বোঝা যাচ্ছে, দিন দিন উত্তাপ বাড়বে।
আওয়ামী লীগ অনেক বছর ধরেই ক্ষমতায়। আমার মনে পড়ে না, মোগল বাদশাহ আওরঙ্গজেব আর কংগ্রেসি প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর পরে কেউ এত বছর একনাগাড়ে এই উপমহাদেশের কোনো একটি রাষ্ট্রের মসনদে ছিলেন।
কয়েক বছর আগে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম সাহেব বলেছিলেন, এই দলের আরও দুই মেয়াদে সরকারে থাকা দরকার। তা না হলে উন্নয়নের জোয়ারে ভাটা নামবে। তো আল্লাহ যদি তাঁদের মনস্কামনা পূরণ করেন, তাহলে আগামী ১০ বছর আর কারও ভাগ্যের শিকে ছিঁড়বে না। অপেক্ষা করতে হবে ২০৩৪ সাল পর্যন্ত।
আওয়ামী লীগ মনে করে, যাঁরা আওয়ামী লীগ করেন না, তাঁরা দেশের মঙ্গল চান না। আওয়ামী লীগ ছাড়া এ দেশে আর কোনো দেশপ্রেমিক দল নেই। দেশকে তো আর দেশদ্রোহীদের হাতে তুলে দেওয়া যায় না!
বিএনপি একটা বড় রাজনৈতিক দল। অতীতে কয়েক মেয়াদে ক্ষমতায় ছিল। টানা ১৭ বছর ধরে দলটি ক্ষমতার বাইরে। এই অপেক্ষার পালা শেষ হবে কবে? দলটি দুই যুগ ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছে। তাঁদের মুখ্য দাবি একটাই—নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীন। দলীয় সরকারের অধীন যে ভালো নির্বাচন হয় না, এ ব্যাপারে সব দলই কমবেশি একমত। কেউ এটা আগে মনে করতেন, এখন করেন না। আবার কেউ এটা আগে মনে করতেন না, এখন করেন। যখন যেটা সুবিধা।
বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবিতে ২০১৪ সালের নির্বাচন শুধু বর্জনই করেনি, তারা প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছিল। নির্বাচনের আগে-পরে আমরা বছরব্যাপী হরতাল-অবরোধ দেখেছি। বিএনপি হয়তো ভেবেছিল, ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর আরেকটি নির্বাচন দিয়ে যেভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়েছিল, ২০১৪ সালেও সে রকম হবে। কিন্তু সেটি হয়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকল এবং পুরো মেয়াদ শেষ করল।