একতরফা নির্বাচন সমাধান নয়
ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হতে যাচ্ছে। নির্বাচন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অপরিহার্য অঙ্গ। সংসদীয় পদ্ধতিতে সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার গঠিত হয়; সংসদে বিরোধী দলের অবস্থানও নির্ণীত হয়। সরকারি দল ও বিরোধী দলের পারস্পরিক সহযোগিতার মধ্য দিয়ে সরকার পরিচালিত হয়। তাই শক্তিশালী বিরোধী দল সংসদীয় পদ্ধতির অপরিহার্য শর্ত। যে সংসদে কার্যকর বিরোধী দল থাকে না, সেই সংসদ বন্ধ্যা, অচল। এর প্রমাণ দশম ও একাদশ সংসদ।
দশম সংসদে ক্ষমতার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সংসদের বাইরে ছিল। জাতীয় পার্টি ছিল একই সঙ্গে সরকারে ও বিরোধী দলে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। আর জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ ছিলেন সংসদের বিরোধী দলের নেতা। রসিকজন বলত, গৃহপালিত বিরোধী দল।
২০১৮ সালের অভিনব নির্বাচনে বিএনপি সংসদে তৃতীয় অবস্থানে। মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের মর্যাদা লাভ করে। ক্ষমতাসীন দলের প্রতি বিরোধী দলের সীমাহীন আনুগত্যের কারণে সংসদের ভেতরে ও বাইরে একদলীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই বলা যায়, ২০২৪ সালে বিএনপিকে বাইরে রেখে নির্বাচন হলে তা হবে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের গঠিত সংসদের পুনরাবৃত্তি মাত্র।
কেবল বিএনপি নয়; ৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে বাম ও ইসলামী দলসহ বেশির ভাগ দলই এই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। প্রতীয়মান হচ্ছে, জাতি ২০১৪ সালের মতো আরেকটি একতরফা নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে। তবে কোনো নাটকীয় ঘটনা ঘটলে আলাদা কথা।
বিএনপি, বাম ও বৃহৎ ইসলামী দলগুলো ছাড়া কেমন নির্বাচন হবে তা আন্দাজ করা যায়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রায়ই বলেন, খেলা হবে। সবাই বোঝেন, বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো ভোটের মাঠে না থাকলে যে খেলা হবে, তা ভানুমতীর খেল। রেফারিরাও ভোট দেবে। তার আলামত আগেই শুরু হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে একাধিক ওসি নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন। তবে সবাই এ রকম নন। বেশির ভাগই প্রকাশ্যে ভোট চাইবেন না। পছন্দের প্রার্থীকে ভোটে জিতিয়ে দেবেন। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির জনসভাকে কেন্দ্র করে পুলিশের ভূমিকা, নয়াপল্টন কার্যালয়ে তালা, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সারাদেশে কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে পুলিশের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ।