জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে জীববৈচিত্র্যে
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব যে পৃথিবীর গোটা জীবজগতের ওপর বেশ ভালোভাবেই পড়েছে, তা একাধিক গবেষকের গবেষণায় উঠে এসেছে। উষ্ণ রক্তবিশিষ্ট অনেক প্রাণীর দেহের আকার ছোট হয়ে যাচ্ছে, রং ও চেহারা বদলে যাচ্ছে, জলবায়ুর পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে টিকে থাকার জন্য অনেক উদ্ভিদের শারীরিক গঠনে পরিবর্তন এসেছে।
সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫২টি প্রজাতির প্রায় ৭০ হাজার পাখির ওপর গবেষণা চালান অস্ট্রেলিয়ার ডেকান বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। গবেষণায় তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন যে, ক্রমশ আকার বদলাচ্ছে সেই সব পাখির। এর ব্যাখ্যাও তাঁরা খুঁজে পেয়েছেন ডারউইনের সেই পুরোনো তত্ত্বে। তত্ত্বে উল্লেখ করা হয়েছিল, দেহের উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণের জন্য দেহের মূল কাঠামো ঠিক রেখে যেকোনো প্রাণী তার দেহতল বাড়ায়। বহু বছর আগে করা ডারউইনের তত্ত্বের সঙ্গে হুবহু মিলে যাচ্ছে একালের বিজ্ঞানীদের গবেষণা ও পর্যালোচনা। অনেক পাখি ও প্রাণীর দেহের মূল কাঠামো বা গড়ন ঠিক থাকলেও কিছু কিছু অঙ্গপ্রত্যঙ্গে পরিবর্তন এসেছে। উদাহরণ হিসেবে গবেষক দলের গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক সারা রাইডিং বলেছেন, ১৮৭১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এই দেড় শ বছরে অস্ট্রেলিয়ান তোতাপাখির চোখের আকার বেড়েছে ৪ থেকে ১০ শতাংশ। এভাবে কোনো কোনো প্রাণীর বেড়েছে নখ ও লেজের দৈর্ঘ্য। এসেছে বিভিন্ন প্রাণীর আচরণেরও পরিবর্তন।
মেরু অঞ্চলের পুরুষ ভালুকেরা বাঁচার জন্য এখন মেয়ে ও শিশু মেরু ভালুকদের খেয়ে ফেলছে। সেখানে বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তনে তাদের খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। এই পরিবর্তনকে বিবর্তনের স্বাভাবিক ধারা হিসেবে পরিবেশের সঙ্গে প্রাণীদের মানিয়ে নেওয়ার ঘটনা হিসেবে মানতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু এসব পরিবর্তনের সঙ্গে যখন পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির সম্পর্ক দেখা যায়, তখন তা আমাদের অবশ্যই দুশ্চিন্তায় ফেলে। কোনো প্রজাতির ব্যাপক পরিবর্তন ও বিলুপ্তি গোটা জীবজগতের খাদ্যশৃঙ্খলের বিশৃঙ্খলাকেই ইঙ্গিত দেয়, যার চূড়ান্ত পরিণতি বিশ্ব জীববৈচিত্র্যের বিলুপ্তির শঙ্কা। আমরা কি তাহলে বিশ্ব জীববৈচিত্র্যের ষষ্ঠ গণবিলুপ্তির দিকেই যাচ্ছি? তেজষ্ক্রিয়মিতি অনুযায়ী পৃথিবীর বয়স আনুমানিক ৪৫৭ কোটি বছর। বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক ও জীবাশ্মবিদ্যাগত ঘটনা থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়, পৃথিবীতে এর আগে পাঁচবার গণবিলুপ্তির ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন যুগের সীমা নির্ধারিত হয়েছে এ ধরনের গণবিলুপ্তির ঘটনায়। উদাহরণস্বরূপ, ক্রিটেশিয়াস যুগ ও প্যালিওজিন যুগের সীমা নির্ধারণ করেছে একটি বিলুপ্তির ঘটনা, যার নাম ক্রিটেশিয়াস-টার্শিয়ারি বিলুপ্তির ঘটনা। এই বিলুপ্তির মাধ্যমে পৃথিবীর বুক থেকে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে যায়।