রাজনীতিতে ‘নীতি’ বলতে কিছু কি আর আছে?
আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর রীতিনীতি নিয়ে প্রশ্ন তুললে দেখা যাবে, নীতি বলতে তাদের মধ্যে আর অবশিষ্ট কিছু নেই; এ ক্ষেত্রে যা কিছু আছে, তা কেবলই পরস্পরের প্রতি হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি, মারামারিতে ভরপুর। রাজনৈতিক নেতারা এখন এক দল অন্য আরেক দলকে ঘায়েল করতে যে কোনো হীন পদ্ধতি অবলম্বনেও পিছপা হন না। এ দেশের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরের প্রতি আদৌ সহনশীল নয়। ফলে স্বাধীনতার ৫২ বছরেও এ দেশে একটি সুষ্ঠু রাজনৈতিক কালচার গড়ে ওঠেনি। পারস্পরিক হানাহানি, মারামারিতেই অর্ধশতকের বেশি সময় পার করে দেওয়ার ফলে আজ এখনো রাজনীতি বলতে দেশ ও জাতির সামনে একটি হতাশাচ্ছন্ন তথা অন্ধকার চিত্রই ভেসে ওঠে; আর সে অন্ধকার থেকে আলোর পথে ফিরে আসার সম্ভাবনাও দেখতে পাওয়া যায় না। কারণ, এ দেশের রাজনৈতিক নেতারা ভীষণ স্বার্থপর; তাদের প্রায় সবাই রাজনীতি করে খান বলে, ক্ষমতাই তাদের একমাত্র ধ্যান ও জ্ঞান। এ অবস্থায়, ক্ষমতা হারানোর ভয়ে এক দল মানুষ যেমন আবোলতাবোল কথা বলেন; আবোলতাবোল কাজ করেন, ঠিক তেমনি অন্য আরেক দল মানুষ ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে ওঠেন; পাগল হয়ে ওঠেন! আর এসব করতে গিয়ে দুই দলের মানুষের মধ্যেই এক ধরনের অস্বাভাবিকতা লক্ষ করা যায়; কখন, কোথায়, কী বলতে হবে বা করতে হবে, সে বিষয়ে তারা খেই হারিয়ে ফেলেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের কথায় এবং কাজের মধ্যে মিল থাকে না; মুখে তারা এক কথা বলেন, আর কাজের সময় অন্য কাজ করে দেশ ও জাতিকে বোকা বানাতে চান। অথচ তারা জানেন না, দেশের মানুষ সবকিছু বোঝেন অথবা বিষয়টি জানলেও তারা সেসব কথা গ্রাহ্য করেন না। কারণ, রাজনৈতিক দলগুলো এক একটি সংগঠিত শক্তিশালী সংগঠন; আর এসব সংগঠন যখন অসুরের মতো শক্তি প্রদর্শন করে, দেশের মানুষ তখন ভীষণ অসহায় হয়ে পড়ে।
রাজনৈতিক দলগুলোর শক্তি মোকাবিলায় যেহেতু সাধারণ মানুষের পালটা কোনো সংগঠন নেই, সুতরাং ‘জোর যার মুল্লুক তার’ পদ্ধতিতে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সিদ্ধান্ত দেশের মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয়। আর সেক্ষেত্রে দেশের মানুষের একমাত্র ভরসার স্থান হলো জাতীয় নির্বাচন। কারণ, একমাত্র নির্বাচনের সময় জনসাধারণ স্বাধীন এবং সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হয়; অন্যথায় অন্যান্য সময়ে তারা ভুক্তভোগী মাত্র। আর সেজন্যই দেশের সাধারণ মানুষ নির্বাচনের দিন ও সময়ের অপেক্ষায় থাকেন যেদিন, সেদিন তারা তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে চান, পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে চান।
স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সালে। এ নির্বাচনে ১৪টি দলের ১০৯১ জন প্রার্থী থাকলেও আওয়ামী লীগ ১১টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করে; বাকি ২৮৯টি আসনেরও ২৮২টিতে বিজয়ী হয়। আর সে নির্বাচনে ছাত্রলীগ ভেঙে সিরাজুল আলম খানের তৈরি জাসদ ৬.৫২ শতাংশ ভোট পেয়ে একটি মাত্র আসন লাভ করে এবং আতাউর রহমান খানের জাতীয় লীগও একটি আসন পায়; তাছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বাদবাকি ৫টি আসন লাভ করে। উল্লেখ্য, ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোকাবিলা করার মতো কোনো দল বা প্রার্থী না থাকা সত্ত্বেও অসদুপায়ে সর্বশক্তি নিয়োগ করা হয়েছিল বলে সে সময়ে অভিযোগ করা হয়েছিল।