দুর্নীতি ও পুঁজি পাচার দমন না করলে ডলার সংকট কাটবে না

বণিক বার্তা ড. মইনুল ইসলাম প্রকাশিত: ১১ নভেম্বর ২০২৩, ১২:৩৬

বর্তমানে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন, ডলারের ক্রমাগত দাম বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, বিদেশে পুঁজি পাচার এবং প্রবাসীদের রেমিট্যান্সে হুন্ডির বেলাগাম আধিপত্যের মতো সমস্যায় জর্জরিত। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, অর্থনীতিকে আবারো স্বস্তিকর অবস্থায় নিয়ে যেতে হলে বাংলাদেশ সরকারকে দুর্নীতি, পুঁজি লুণ্ঠন এবং পুঁজি পাচারের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর দমন নীতি গ্রহণ করতে হবে। এজন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে অবিলম্বে কঠোরভাবে হুন্ডি ব্যবস্থাকে দমন। ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণের অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু গত পৌনে পাঁচ বছরে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম একেবারেই ‘বাত্ কা বাতে’ পর্যবসিত হয়েছে। আমাদের স্মরণে আছে যে ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত পরপর পাঁচ বছর দুর্নীতি গবেষণা সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বিশ্ব র‌্যাংকিং অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তকমা পেয়েছিল। ওই পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথম বছর ক্ষমতাসীন ছিল আওয়ামী লীগ, পরের চার বছর ক্ষমতাসীন ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট। এরপর সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরের শাসনামলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রচণ্ড দমননীতি বাস্তবায়নের কারণে বাংলাদেশ ওই ‘ন্যক্কারজনক চ্যাম্পিয়নশিপ’ থেকে নিষ্কৃতি পেয়েছিল। কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশন বর্তমানে ‘নখদন্তহীন ব্যাঘ্রে’ পরিণত হয়েছে। ফলে ২০১৪ সাল থেকে নয় বছর ধরে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় আফগানিস্তানের পর সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তকমা অর্জন করে চলেছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ২০২২ সালের বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ১২ নম্বরে অবস্থান বাংলাদেশের। 


১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ সরকারের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) বরাত দিয়ে দেশের পত্রপত্রিকায় খবর বেরিয়েছিল যে শুধু হুন্ডি প্রক্রিয়ায় দেশ থেকে গড়ে বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। (অর্থাৎ, সিআইডির দাবি ৭৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা দেশেই আসছে না। অথচ এ পরিমাণ টাকা হুন্ডি প্রক্রিয়ায় দেশ থেকে বিদেশে পুঁজি পাচারকারীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বৈদেশিক মুদ্রা হিসেবে জমা হয়ে যাচ্ছে)। এর সঙ্গে আমদানির ওভার-ইনভয়েসিং, রফতানির আন্ডার-ইনভয়েসিং এবং রফতানি আয় দেশে ফেরত না আনার মতো মূল সমস্যাগুলো যোগ করলে দেখা যাবে প্রত্যেক বছর এখন কমপক্ষে দেড় লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে। এর মানে, বাংলাদেশ থেকে বছরে কমপক্ষে ১৫-১৬ বিলিয়ন ডলার পুঁজি এখন বিদেশে পাচার হচ্ছে, যার বড় অংশটাই পাচার হচ্ছে হুন্ডির মাধ্যমে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের গ্রস বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি মোতবেক ১৯ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে, বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ ১৭ বিলিয়ন ডলারেরও কম। প্রতি মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার বিক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছে। এ পতনের ধারা অব্যাহত থাকলে রিজার্ভ শূন্যেও নেমে যেতে পারে।


বাংলাদেশে কার্ব মার্কেটের ডলারের দামের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক স্বীকৃত হারের ব্যবধান এখনো ৫-৬ টাকা রয়ে গেছে। এ দুই দামের এত বড় পার্থক্য শুধু হুন্ডি ব্যবস্থাকেই চাঙ্গা করছে। অর্থমন্ত্রীর মতে, প্রায় অর্ধেক রেমিট্যান্স হুন্ডি প্রক্রিয়ায় দেশে আসে। আমার মতে, অধিকাংশ রেমিট্যান্স হুন্ডি ব্যবস্থায় দেশে আসছে। এর মানে, আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে প্রতি বছর ২১-২২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এলেও আরো ২১-২২ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ বা আরো বেশি অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে অর্থনীতিতে যুক্ত হচ্ছে! এর বেশির ভাগই হুন্ডিওয়ালাদের কাছে বিক্রীত ব্যাংকের ঋণ, যার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পাচারকারীর বিদেশী অ্যাকাউন্টে জমা হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন যে টালমাটাল অবস্থার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে সেটার জন্য দায়ী চারটি প্রধান পুঁজি পাচার প্রক্রিয়া: ১) আমদানিতে ব্যাপক প্রবৃদ্ধির আড়ালে ওভার-ইনভয়েসিং পদ্ধতিতে পুঁজি পাচার ২) রফতানিতে ব্যাপক আন্ডার-ইনভয়েসিং পদ্ধতিতে পুঁজি পাচার ৩) রফতানি আয় দেশে ফেরত না এনে বিদেশে রেখে দিয়ে ওই অর্থ দিয়ে বিদেশে ঘরবাড়ি-ব্যবসাপাতি কেনার হিড়িক এবং ৪) দেশের ব্যাংক ঋণ নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠীগুলো কর্তৃক হুন্ডিওয়ালাদের ব্যাংক ঋণের টাকা প্রদানের মাধ্যমে এর সমপরিমাণ ডলার হুন্ডি প্রক্রিয়ায় বিদেশে পাচার। 

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও