অবরোধ কি বিএনপিকেই অবরুদ্ধ করছে
রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে অবরোধের প্রচলন ঘটিয়েছে জামায়াত ও বিএনপি ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে। তখন এর বীভৎস চিত্র দেশের মানুষ দেখেছিল। ঢাকা থেকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছিল। জামায়াত ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা পেট্রলবোমার ব্যাপক অপব্যবহার করেছিল। রাস্তাঘাট, গাছ কেটে চলাচলের অনুপযুক্ত করে রেখেছিল। কোথাও কোথাও রাস্তা কেটে গর্তও করেছিল। ফলে স্বাভাবিকভাবে যান চলাচল করতে পারেনি। বিশেষ করে ২০১৫ সালে টানা ৯৩ দিন হরতাল ও অবরোধ ডেকে মানুষকে অনেকটাই ঘরবন্দী করে রেখেছিল। মানুষের কাজকর্ম প্রায় বন্ধই ছিল। ছোটখাটো বহু ব্যবসায়ী পথে বসে গিয়েছিলেন। এরপর একসময় অবরোধ ভেঙে মানুষ বের হতে থাকে। বিএনপি-জামায়াতের নেতারা হাল ছেড়ে দিয়ে ঘরে ঢুকে যান। মানুষ মনে করেছিল আর কখনো এই কর্মসূচি রাজনীতিতে কেউ প্রয়োগ করবে না।
কিন্তু কে কার কথা শোনে! ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে বিএনপির নেতা-কর্মীরা উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেছিলেন। একজন পুলিশ কনস্টেবলকে পিটিয়ে-কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল, ৪০ জনের বেশি পুলিশ আহত হয়েছিল, ৩০ জনের বেশি সাংবাদিক বিএনপির উচ্ছৃঙ্খল কর্মীদের দ্বারা নিগৃহীত হয়েছেন, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে রাখা অ্যাম্বুলেন্স, গাড়ি পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয়েছে, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতির বাড়ি, বিচারপতিদের লাউঞ্জ আক্রান্ত হয়েছে। ২৮ তারিখ কথা ছিল শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করে বিএনপির নেতারা ফিরে যাবেন। কিন্তু পরে বোঝা গেল ওটা ছিল তাদের মুখের কথা। বাস্তবটা ছিল সরকারের পতন না না হওয়া পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত নেতারা মাঠ ত্যাগ করবেন না।
একই সঙ্গে জামায়াত-শিবিরও ওই দিনের মহাসমাবেশে অংশ নিয়েছিল, তারাও তাণ্ডবে যুক্ত হয়েছিল। এ ছাড়া বিএনপি অফিসে মিয়া আরেফিকাণ্ড সবাইকে হতবাক করেছে। বিএনপি আসলেই ২৮ অক্টোবর থেকে মহাযাত্রার নামে এমন কিছু করতে চেয়েছিল, যার স্বরূপ পুরোটা দেখার সুযোগ হয়নি। কারণ সভা শুরুর আগেই উচ্ছৃঙ্খল কর্মীরা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে সমাবেশ পণ্ড করে দিয়েছিল।
বিএনপি মনে করেছিল, সরকার যেহেতু তাদের সভা শুরু করার আগেই পণ্ড করে দিয়েছে, তাই এর প্রতিবাদে পরদিন দেশব্যাপী হরতাল ডাকে। হরতাল শেষ হতে না হতেই তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা হলো। ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ২৮ তারিখের হত্যাকাণ্ড ও আক্রমণাত্মক ঘটনার নানা সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করে বিএনপির মহাসচিবসহ বেশ কয়েকজন নেতাকে আটক করে। মিয়া আরেফিকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য মিয়া আরেফিসহ লে. জে. (অব.) সারওয়ার্দীকেও আটক করা হয়। এর ফলে অনেক কিছুই বের হতে থাকে, যা বিএনপির ২৮ তারিখের আন্দোলন সম্পর্কে এত দিনকার ধারণার বিপরীত চিত্র ফুটে ওঠে।