আজ থেকে ২৫ বছর আগে দেশে একটা নতুন সংবাদপত্র প্রকাশিত হতে শুরু করে। নাম ছিল প্রথম আলো। নাম শুনে কেউ কেউ কিন্তু বলেছিলেন, এটা কোনো খবরের কাগজের নাম হতে পারে নাকি! ‘প্রথম আলোর চরণধ্বনি উঠল বেজে যেই’—রবীন্দ্রনাথের গান থেকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাসের নাম ‘প্রথম আলো’। শামসুর রাহমানের কবিতায় আছে, ‘কাঁচা দুধের মতো ভোরের শাদা আলো।’ দ্রুতই পত্রিকাটা মানুষের প্রিয় হয়ে ওঠে, আর প্রিয় মানুষের নামের মতো প্রথম আলো নামটাও আমাদের কাছে বড় মধুর বলে মনে হতে থাকে।
আগামীকাল প্রথম আলোর রজতজয়ন্তী। প্রথম আলোর মূল কাগজ ছিল ১২ পৃষ্ঠা, সঙ্গে ৪ পৃষ্ঠার ক্রোড়পত্র। প্রতিদিনই রঙিন। সে সবই ছিল অভিনব।
পত্রিকাটি দ্রুত জনপ্রিয়তার শিখরে উঠতে সক্ষম হয়। এর কারণ, বাইরের দিক থেকে দেখলে, নতুনত্ব, আধুনিকতা, প্রগতিশীলতা। আর ভেতরের দিকে তাকালে, প্রথম আলোর পাঠকপ্রিয়তার কারণ এর দলনিরপেক্ষতা, বস্তুনিষ্ঠতা এবং সত্য কথা বলার সাহস।
সব সরকারের আমলেই পত্রিকাটি শাসকদের বিরাগভাজন হয়, প্রথম আলোয় সরকারি বিজ্ঞাপন দেওয়া বিএনপি সরকারের আমলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও। এটাকেও একটা দিকদর্শন যন্ত্রের কাঁটা হিসেবে দেখা যায়, যদি সরকারমাত্রই কোনো সংবাদমাধ্যমকে নিয়ে অস্বস্তি বোধ করে, তাহলে বুঝতে হবে, মাধ্যমটি ঠিক পথেই আছে।
কারণ, সংবাদমাধ্যমের কাজই ক্ষমতাকে পাহারা দিয়ে রাখা। যেকোনো দেশে ক্ষমতা দুর্বিষহ নিপীড়নতন্ত্রে পরিণত হতে পারে; যদি না থাকে স্বাধীন সংবাদমাধ্যম এবং স্বাধীন বিচার বিভাগ।
প্রথম আলোর সাফল্যের পেছনে একজন মানুষের অবদান এবং পরামর্শের কথা আজকের দিনে বিশেষভাবে স্মরণ করতেই হবে। তিনি হলেন মিডিয়া স্টার লিমিটেডের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান। তিনি সংবাদমাধ্যমের লোক ছিলেন না, কিন্তু আশ্চর্য রকমের দূরদর্শী ছিলেন।
তাঁর অন্তর্দৃষ্টি ও বিচক্ষণতার কোনো তুলনা হয় না। তিনি বলে দিয়েছিলেন, ব্যক্তি হিসেবে আপনাদের প্রত্যেকের রাজনৈতিক মত থাকতে পারে, কিন্তু যখন আপনি লিখবেন, আপনাকে হতে হবে দলনিরপেক্ষ।
তিনি সাংবাদিকদের সততার ওপর খুব জোর দিতেন। আর তিনি কোনো দিনও জানতে চাইতেন না, কাগজে কী ছাপা হবে না হবে। এই সিদ্ধান্ত সম্পাদকের। তিনি বলতেন, আপনারা নিজের আয়ে চলুন, তাহলে আপনাদের আর বিনিয়োগকারীদের কথাও শুনতে হবে না, সরকার কিংবা প্রভাবশালী মহলের দাক্ষিণ্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হবে না।
- ট্যাগ:
- মতামত
- সংবাদপত্র
- খবরের কাগজ