সংঘর্ষ বা গণ-অভ্যুত্থান কোনোটারই সম্ভাবনা নেই
আজ ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিরোধী দল বিএনপির মহাসমাবেশ, সরকারও পাল্টা কর্মসূচি ডেকেছে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে, নির্বাচন নিয়ে নানা শঙ্কা ও জনমনে নানা প্রশ্ন নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হারুন-অর-রশিদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শেখ সাবিহা আলম।
প্রথম আলো: আজ ঢাকা শহরে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ বেশ কিছু দলের সমাবেশ। তারিখটিও ২৮ অক্টোবর। নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ এই দিনে সমাবেশ ডাকায় মানুষের মনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই শঙ্কা কি যৌক্তিক, কোন পথে এগোচ্ছি আমরা?
হারুন-অর-রশিদ: সংঘাতময় পরিস্থিতি এটাই প্রথম না। নব্বইয়ের দশক থেকে আমরা সাংঘর্ষিক রাজনীতি হতে দেখেছি। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পর মাগুরা ও মিরপুরের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের সূচনা হয় এবং একপর্যায়ে বিরোধীদলীয় ১৪৭ জন সংসদ সদস্য একযোগে পদত্যাগ করেন। আমরা ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ঘিরে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করেছি। ২০০৬-০৭–এর কথা মনে করুন। ২০১৪ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যা দেখেছি আমরা, সেটা ছিল সন্ত্রাসের তাণ্ডবলীলা। ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলেই দেখবেন, দুই দলের মধ্যে যে আদর্শিক দ্বন্দ্ব, সাংঘর্ষিক সম্পর্ক, সেটা বরাবরই নির্বাচনের সময় দৃশ্যমান হয়। তবে এবার পরিস্থিতি অতটা সংঘাতময় নয়।
প্রথম আলো: আপনি শুরুতেই বলেছেন, আপনার মনে হচ্ছে এবার পরিস্থিতি অতটা সংঘাতময় নয়। কেন মনে হচ্ছে?
হারুন-অর-রশিদ: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে জনগণের সচেতনতা, মিডিয়া, বিদেশিদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি—এসব কিছু মিলে একটা পরিবেশ–পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ২০১৪ ও ২০১৮ সালের আরেকটি সংস্করণ হতে পারে না। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন এটা অবাধ ও সুষ্ঠু হতে বাধ্য। এর কোনো আর বিকল্প নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংসদীয় দলের যে সভা করলেন, সেখানে স্পষ্ট বলেছেন, আপনাদের নিজেদের যোগ্যতায় নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। আমি কাউকে নির্বাচিত করে নিয়ে আসতে পারব না। তার মানে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার কোনো বিকল্প নেই। যদি এবার নির্বাচন সুষ্ঠু না হয়, যারাই এ জন্য দায়ী থাকবে, তাদেরই চড়া মূল্য দিতে হবে। দলীয় সরকারের অধীনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন একটি অগ্নিপরীক্ষা।
প্রথম আলো: কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা কতটুকু?
হারুন-অর-রশিদ: এবারকার নির্বাচন নিয়ে আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র বা উন্নয়ন সহযোগী বলি যাদের, তারা পর্যবেক্ষণ করছে। আগের কোনো নির্বাচনেই তাদের এত মনোযোগ ছিল না। আমার মতে, এই মনোযোগ ক্ষমতাসীন দল বা বিরোধী দল—সবার জন্য প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করবে। যদি জাতীয় ক্ষেত্রে বলি, জনগণ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে চায়। ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) পাঁচ হাজার তরুণের ওপর জরিপ করেছে। তাদের ৯০ ভাগ বলেছে তারা ভোট দিতে যাবে।
প্রথম আলো: কিন্তু বিএনপি তো এক দফা দাবিতে আন্দোলন করছে এবং বলেছে, দলীয় সরকারের অধীনে তারা নির্বাচনে যাবে না। এ অবস্থায় অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন কী করে হবে?
হারুন-অর-রশিদ: নির্বাচনে বিএনপি না এসে ৫০০ দল এলেও কোনো লাভ হবে না, এটা ঠিক। তবে ২০১৪ সালে যে সিদ্ধান্ত তারা নিয়েছে, একই কাজ করলে রাজনৈতিকভাবে তাদের চরম মূল্য দিতে হবে। প্রথমত, তারা সরকার পতনের এক দফা দাবি করেছে। তার মানে বিএনপিকে একটা গণ-অভ্যুত্থান করতে হবে। কিন্তু শুধু নেতা–কর্মীদের ওপর নির্ভর করে একটা গণ-অভ্যুত্থান ঘটানো যায় না। এ জন্য দরকার গণজাগরণ। দ্বিতীয়ত, তারা যে কথাগুলো বলছে, তা নিয়ে জনগণের কাছে যাওয়া। এতে ভোটে যদি জনগণের রায়ের কোনো প্রতিফলন না ঘটে বা কোনো পক্ষ যদি ঘটাতে না দেয়, তাহলে জনগণই তাদের পক্ষে দাঁড়াবে। তৃতীয়ত, তারা নির্বাচন বর্জন করতে পারে। জাতীয় পার্টি তখন ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে, অন্য দলগুলোও আসবে। কোনো প্রতিযোগিতা না থাকলে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনেও কোনো আপত্তি থাকবে না। তাই এই নির্বাচন বিএনপির জন্যও অগ্নিপরীক্ষা।