দুর্গা অর্থ দুর্গতিনাশিনী। দুর্গাপূজা মানে দুর্গতিনাশিনী শক্তির জাগরণ বা শুভ শক্তির জাগরণ। মানুষের ভেতরে দেবত্বকে জাগিয়ে তোলার সাধনা। বর্তমানে পূজা বলতে যা হয়; ঢাক ঢোল মন্ত্র পাঠ, তা নয়। এই পূজা হলো শুভশক্তিকে জাগিয়ে তোলার মগ্নতা। দুর্গাপূজা কেবলমাত্র উৎসবের নয়। উৎসবে উত্তেজনা থাকে। উচ্ছৃঙ্খলতা থাকে। সীমা লংঘন করার আশঙ্কা থাকে। সেটি সত্যিকারের পূজায় থাকে না।
বর্তমানে দুর্গাপূজা শারদীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। শরতের শারদীয় উৎসব। অথচ বলা হচ্ছে, তিনি মাতৃরূপে, পিতৃরূপে, শক্তিরূপে, শান্তিরূপে, বিদ্যারূপে আবির্ভূতা এক মহাশক্তি। উৎসব মনে করায় পূজাকে ঘিরে অনেক কিছুই হয় যা পূজার মধ্য পড়ে না। দেবীর প্রতি নিবেদিত প্রেমারতিও অনেক সময় এবং অনেক জায়গায় হয়ে উঠে অশ্লীল এবং তামসিক নৃত্যে। চন্ডিপাঠ এবং ভক্তিমূলক গান পরিবেশনের পরিবর্তে সাউন্ডবক্সে বাজানো হয় হিন্দি এবং বাংলা ছায়াছবির হালকা এবং চটুল গান। যা পরিবেশকে অস্থির করে।
প্রাচীন ভারতের ধর্ম-সংস্কৃতির দিকে নজর দেই তাহলে দেখব, দেবী পূজার মূল উৎস হচ্ছে সনাতন ধর্মের আদি শাস্ত্র বেদ। অভৃশ্য ঋষির কন্যা ব্রহ্মবাদিনী বাক সর্ব প্রথম তার অতীন্দ্র ধ্যাননেত্রে বা ধ্যানচোখে আবিষ্কার করেন দেবীসূক্ত। এই দেবীসূক্তই হচ্ছে মাতৃবন্দনার মঙ্গলসূত্র। কালনিয়ন্ত্রী মহাশক্তি শুধু পুরুষ দেবতারূপে পূজার পাত্র হননি, স্ত্রী দেবীর মাধ্যমেও মহাশক্তিকে আরাধনা করা হয়েছে যুগে যুগে। বেদে মূর্তিপূজার উল্লেখ নেই। কিন্তু দেবদেবীর কথা রয়েছে। এই দেবীপূজা পরবর্তী সময়ে দুর্গাপূজা নামে পূজিত হয়।