সবজি রফতানি বৃদ্ধিতে উত্তম কৃষিচর্চা
বাংলাদেশে গত এক যুগে সবজি উৎপাদনে ঘটে গেছে এক নীরব বিপ্লব। বর্তমানে বছরে প্রায় দুই কোটি টন সবজি উৎপাদন করে বাংলাদেশ বিশ্বে সবজি উৎপাদনে তৃতীয় অবস্থানে উন্নীত হয়েছে। এটা দেশের কৃষি ও কৃষকের জন্য এক বিশাল অর্জন ও গর্বের বিষয়। দেশে বর্তমানে শতাধিক ধরনের সবজি উৎপাদন হচ্ছে। উৎপাদনের সঙ্গে দেশের ১ কোটি ৬২ লাখ কৃষি পরিবার অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বাংলাদেশের কৃষিতে গত পাঁচ দশকে খোরপোষ কৃষি থেকে বাণিজ্যিক কৃষিতে উত্তরণ ঘটেছে। এখন আমাদের রফতানিমুখী কৃষির দিকে নজর দিতে হবে। বাংলাদেশ থেকে ৫০টিরও বেশি দেশে সবজি রফতানি হচ্ছে। সবজি রফতানি বাড়াতে হলে কৃষকদের উত্তম কৃষিচর্চা অনুসরণপূর্বক নিরাপদ সবজি উৎপাদন করতে হবে। এতে কৃষক যেমন লাভবান হবেন, তেমনি দেশের মানুষ থাকবে রোগমুক্ত, পরিবেশ থাকবে নিরাপদ এবং অর্জিত হবে প্রচুর বৈদেশিক মদ্রা।
গুড এগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিসেস বা উত্তম কৃষিচর্চা সংক্ষেপে গ্যাপ নামে পরিচিত। এটি হলো সামগ্রিক কৃষি কার্যক্রমে অনুসরণকৃত একগুচ্ছ নীতিবিধি ও প্রযুক্তিগত সুপারিশমালা, যা সামগ্রিক কৃষি উৎপাদন, সংগ্রহ ও সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা ও পরিবহনের বিভিন্ন স্তরে প্রয়োগ করা হয় এবং যা মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, পরিবেশ সংরক্ষণ, পণ্যের মানোন্নয়ন ও কৃষি শ্রমিকের সুস্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও কাজের পরিবেশ উন্নত করে। ইউররোপের সুপারশপে কৃষিপণ্য সরবরাহকারীদের উদ্যোগে ১৯৯৭ সালে ইউরোপগ্যাপ কার্যক্রম শুরু হয়, যা ২০০৭ সালে গ্লোবালগ্যাপ নামকরণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন দেশ তাদের নিজস্ব উত্তম কৃষিচর্চা বা গ্যাপ কার্যক্রম চালু করে। আমাদের দেশেও বাংলাদেশগ্যাপ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আশা করি অচিরেই এর সার্টিফিকেশন শুরু হবে। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে নিরাপদ ফসল উৎপাদনসহ রফতানি বাজারে প্রবেশের জন্য গ্যাপ অনুসরণ অত্যাবশ্যক। বাংলাদেশগ্যাপ বাস্তবায়নের ফলে উৎপাদিত কৃষিপণ্য নিরাপদ, উন্নত ও মানসম্পন্ন হবে, আয়বৃদ্ধি ও অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারসহ টেকসই পরিবেশ ও সামাজিক গ্রহণযাগ্যতা বাড়বে এবং খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। এ লক্ষ্যে প্রণয়নকৃত দলিলটি ‘বাংলাদেশ উত্তম কৃষিচর্চা নীতিমালা-২০২০’ নামে ডিসেম্বর ২০২০ থেকে কার্যকর হয়।
- ট্যাগ:
- মতামত
- সবজি
- সবজি রফতানি