আশ্বিনের শেষার্ধে আসিয়া বঙ্গীয় আকাশে যখন মেঘ কাটিয়া গিয়া হালকা কুয়াশা পড়িবার কথা, তখন দেশের কোনো কোনো এলাকায় ৪৭৬ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত আর যাহাই হউক, স্বাভাবিক হইতে পারে না। স্বীকার্য, এই দেশে কার্তিকেও বৃষ্টিপাত বিরল নহে, কিন্তু খোদ বর্ষাকাল প্রায় বৃষ্টিহীন থাকিবার পর শরৎকালজুড়িয়া মেঘের এইরূপ ঘনঘটা কবে দেখা গিয়াছে? শনিবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনসূত্রে দেখা যাইতেছে, ভারী বৃষ্টিপাত ও দমকা হাওয়ায় সমগ্র দেশেই বিপর্যয় নামিয়া আসিয়াছে। সড়ক ও রেলপথ ডুবিয়া গিয়াছে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় গৃহে পানি প্রবেশ করিয়াছে, প্লাবিত হইয়াছে ফসলের ক্ষেত ও মাছের ঘের। অকস্মাৎ প্লাবনে তিস্তাসহ উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি নদীতে দেখা দিয়েছে ভাঙন ও বন্যা। কিন্তু এই পরিস্থিতিকে কেবল প্রকৃতির খামখেয়ালের উপর ছাড়িয়া দেওয়া হইলে চলিবে না। জলবায়ু পরিবর্তনের সহিত অব্যবস্থাপনা ও অদূরদর্শিতা যুক্ত হইয়াই কৃষি ও জনজীবনের পরিস্থিতি সঙ্গিন করিয়া তুলিয়াছে।
আমরা গভীর উদ্বেগের সহিত দেখিতেছি, ঢাকা ও চট্টগ্রামের ন্যায় বৃহৎ নগরীগুলিতে বাড়তি বিপদ হইয়া আসিতেছে জলাবদ্ধতা। শুক্রবারও সারাদিনের সবিরতি বৃষ্টিপাতে রাত্রিবেলা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় দুর্ভোগে পড়িয়াছেন নাগরিকগণ। কেবল এইদিন নহে, আমরা দেখিতেছি ক্রমবর্ধমান হারে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় মাঝারি বৃষ্টিপাতেই পানি জমিতেছে। স্বল্প সময়ে অধিক বৃষ্টিপাতে নগর কিংবা শহরে পানি জমিয়া থাকিতেই পারে; কিন্তু উহার নিষ্কাশন হইতে দীর্ঘসময় লাগিবে কেন? সাম্প্রতিক সময়ে জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে কেহ কেহ বলিয়াছেন, রাজধানীজুড়িয়া উন্নয়ন প্রকল্প চলমান থাকিবার কারণে পানি নামিয়া যাইতে পারিতেছে না। আমাদের প্রশ্ন, প্রকল্প চলিলে যেই নিষ্কাশন সংকট দেখা দিবে, উহা কি পূর্বেই ভাবা উচিত ছিল না? এই বিষয়ে আমাদের সন্দেহ সামান্য যে, উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনায় নগরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা চৌকস করিয়া তোলা সম্ভব। শুষ্ক মৌসুমেই যদি যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করা সম্ভব হয়, বর্ষায় জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণ কঠিন হইতে পারে না।