ভ্যানের হেলপার, পোশাকশ্রমিক থেকে কিবরিয়া যেভাবে ফ্রিল্যান্সার হলেন
কখনো দারোয়ানের চাকরি, কখনো গ্যারেজের কর্মী, কখনো ডেলিভারি বয়, আবার কখনো ময়দাবাহী ভ্যানের হেলপার। বেঁচে থাকার জন্য একের পর এক চাকরি করেছেন, ভালো কিছু করার চেষ্টায় দিনের পর দিন কষ্ট করে গেছেন তারেক রাহীম কিবরিয়া। ১ অক্টোবর রাজধানীর একটি রেস্তোরাঁয় দেখা হয় এই তরুণের সঙ্গে। একসময়ের শ্রমজীবী কিবরিয়া এখন তথ্যপ্রযুক্তি খাতের একজন ফ্রিল্যান্সার ও উদ্যোক্তা। এখন কাজ করেন গ্রাফিকস ডিজাইন ও অ্যানিমেশনের। কিবরিয়া বলছিলেন তাঁর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। একটা সময় রাতে ঘুমানোর সময় বালিশও পাননি, মাথার নিচে ইট রেখে ঘুমাতে হয়েছে। সেই কিবরিয়া এখন ফ্রিল্যান্সিং করে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা আয় করেন। রয়েছে জিডি ডটস নামের নিজের একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিংয়ের নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়।
শুরুটাই বেদনাবিধুর
১৯৯৪ সালের ডিসেম্বর। শিশু কিবরিয়ার বয়স তখন ছয় মাস। তাঁদের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায়। সেই সময় হঠাৎ করেই কিবরিয়ার মা মারা যান। এর কিছুদিন পরই তাঁর বাবা আবার বিয়ে করেন। সংসারে শুরু হয় অশান্তি। তিন ভাইয়ের মধ্যে কিবরিয়া সবার ছোট। ছোট্ট সেই শিশুকে পাঠানো হয় আরেক পরিবারে, ‘পালক পুত্র’ হিসেবে। কারণ, তাঁদের কোনো ছেলে ছিল না, একটি মেয়ে ছিল। ভালোই চলছিল, থাকতেন লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে। সেই পরিবারে মা ও মেয়ে কিবরিয়াকে ভালোবাসলেও অন্যরা তাঁকে মেনে নিতে পারতেন না। প্রায়ই তাঁকে মার খেতে হতো। কিবরিয়ার মা ২০০৫ সালে তাঁকে মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেন। লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার হায়দারগঞ্জ টিআরএম ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতে থাকেন কিবরিয়া।
২০১২ সাল এই মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করেন কিবরিয়া। এরপর কোথায় যাবেন? কিবরিয়া ভেবে পান না। এক বন্ধুর সঙ্গে কথা বলে চলে যান চট্টগ্রামে। সেখানে একটি অ্যালুমিনিয়াম পণ্যের দোকানে চাকরি নেন তিনি। বেতন মাসে পাঁচ হাজার টাকা। পাশাপাশি পড়াশোনাও করতে লাগলেন, ইতিহাস বিষয়ে চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজে ভর্তি হলেন স্নাতক শ্রেণিতে। আট মাস পর কিবরিয়ার মন আর টেকেনি চট্টগ্রামে।