
ভারত-কানাডা বিরোধ কীসের ইঙ্গিত
ভারত ও কানাডার বিরোধের সূচনা খালিস্তান ইস্যুতে যা জাস্ট্রিন ট্রুডোর জি-২০ সম্মেলনে অংশ নিতে এবারের সফরের সময় ফের প্রকাশ্যে এসেছে। ভারতে খালিস্তানপন্থিদের প্রভাব অবশিষ্ট না থাকলেও কানাডা ও আরও কিছু পশ্চিমা দেশে শিখদের খালিস্তান আন্দোলন বেশ শক্তিশালী। ভারতের অভিযোগ উগ্রপন্থি খালিস্তানিরা কানাডায় বসে ভারতে নাশকতার পরিকল্পনা করছে এবং বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। অন্যদিকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নীতি বাস্তবায়নে খালিস্তানিদের আন্দোলনে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করতে চায় না কানাডা। পরিস্থিতির চূড়ান্ত অবস্থার দিকে যায় কানাডায় শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর বন্দুকধারীদের হাতে নিহত হওয়ার পর থেকে। হরদীপ সিং স্বাধীন খালিস্তানপন্থি সংগঠন ‘শিখস ফর জাস্টিস’-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ভারতের পক্ষ থেকে এই সংগঠনটির বিরুদ্ধে কানাডা ও ভারতে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানো ও সহিংসতা উসকে দেওয়ার অভিযোগ আছে। ভারত খালিস্তানপন্থি ৯টি নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের তালিকা কানাডাসহ মিত্র দেশ যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিনিময় করেছে। এই দেশগুলোতে শিখ জনগোষ্ঠীর উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য এবং রাজনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক প্রভাবশালীও বটে। অন্যদিকে এই পাঁচটি দেশ ‘দ্য ফাইভ আইজ’ আবার একে অপরের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং ইলেকট্রনিক প্রযুক্তিনির্ভর গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় করে থাকে।
ভারতীয় গণমাধ্যম ও কোনো কোনো বিশ্লেষকদের মতে জাস্ট্রিন ট্রুডো তার নিজস্ব রাজনৈতিক স্বার্থে খালিস্তান ও হারদীপ সিংয়ের ইস্যুটি ব্যবহার করছেন। ২০২১ সালের নির্বাচনে ট্রুডোর লিবারেল পার্টি স্বল্প ব্যবধানে জয়ী হলেও পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয় ফলে সরকার গঠনে জগমিত সিং নেতৃত্বাধীন ‘নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির’(এনডিপি) সমর্থন গ্রহণ করে। জগমিত সিং খালিস্তান আন্দোলনের সমর্থক। এনডিপির সমর্থন ছাড়া এই মুহূর্তে জাস্টিন ট্রুডোর ক্ষমতায় টিকে থাকা অসম্ভব। খালিস্তান ইস্যু নিয়ে কানাডা ও ভারতের মধ্যে দ্বন্দ্ব জাস্টিন ট্রুডোর বাবা পিয়েরে ট্রুডোর সময় থেকেই। তবে সম্পর্কের কিছুটা অগ্রগতি হয় ২০১৮ সালে জাস্ট্রিন টুডোর ভারত সফরের সময়, তখন ভারতের পক্ষ থেকে কানাডায় খালিস্তানপন্থি কয়েকটি সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে আহ্বান জানানো হয়। তবে কানাডার রাজনীতিতে প্রভাবশালী শিখদের উপেক্ষা করা সম্ভব হয়নি। বলা হয় কানাডার মোট ভোটারের প্রায় চার শতাংশ ভারতীয় আর তার মধ্যে চল্লিশ শতাংশের কিছুটা বেশি শিখ জনগোষ্ঠী। খালিস্তান আন্দোলনের পর ভিন্নমতাবলম্বী অনেক শিখ কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেছেন বা অন্য উপায়ে নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বিরোধ
- কানাডা-ভারত সম্পর্ক