আবু হেনা মোস্তফা কামাল, কেন তিনি উপেক্ষিত
আবু হেনা মোস্তফা কামাল কি কিছুটা অবহেলিত ও উপেক্ষিত? উনার কবিতা, প্রবন্ধ-গবেষণা, গীতবাণী বাংলা ভাষা ও সাহিত্যিকে দিয়েছে বিশেষ মহিমা ও মর্যাদা। জীবন, কর্ম ও প্রতিভার ঐশ্বর্য থেকে প্রজন্মের সুযোগ রয়েছে ঋদ্ধ হওয়ার, নিজেদেরকে বিশ্ববীক্ষায় বিকশিত ও নির্মাণ করার। তারপরও তিনি আড়ালে রইলেন। এ কী আমাদের মেধা ও ধীশক্তির সংকীর্ণতা, নাকি কপটতার বহিঃপ্রকাশ? এ প্রশ্নের উত্তর তালাশ যেমন জরুরি, তেমনি আমাদের বৌদ্ধিকতাকে উচ্চকিত ও অনির্বাণ করতে অপরিহার্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে সুযোগ পেয়ে না- সচেতনভাবে, সবকিছু বিবেচনায় তিনি বাংলায় ভর্তি হয়েছিলেন। ঘটনাটা গল্পের মতো, নাকি গল্পকে ছাড়িয়ে রূপকথাকে ছুঁয়ে যায়? বলছি, আবু হেনা মোস্তফা কামালের কথা। যিনি ছিলেন প্রখ্যাত কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও গীত রচয়িতা। যশস্বী হয়েছিলেন অধ্যাপনায়, বাগ্মিতায়, উপস্থাপনায় ও প্রশাসকরূপে।
আবু হেনা যখন নবম শ্রেণীর ছাত্র, তখন হারান পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বাবা শাহজাহান আলীকে। তিন ভাইবোনের অভিভাবকের দায়িত্ব নেন ছোট খালু, আবদুল কুদ্দুস ভুঁইয়া। প্রসঙ্গ আত্মজীবনীমুলক লেখায় উল্লেখ করেছেন। শৈশব-কৈশোরে শিক্ষার্থী হিসেবে ছিলেন সাধারণমানের, কিংবা তার চেয়েও আরেকটু মন্দ। নবম শ্রেণী পর্যন্ত সব বিষয়ে পাস করেননি কোনদিন। বরং বিস্ময় ছিল, মনের মধ্যে আঁকুপাঁকু করতো একটাই প্রশ্ন 'অন্যেরা সব বিষয়ে পাস করে কীভাবে?' সেই আবু হেনা হঠাৎ-ই সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে হয়ে ওঠেন মেধাবী একজন। যেনতেন মেধাবী নয়। একেবারে মেধাবীদের মেধাবী। বোর্ডের পরীক্ষায় প্রথম দিকে জায়গা করে নেন। বাবার মৃত্যু উনাকে বদলে দেয়, আমূল-অবিশ্বাস্যভাবে, বাবা-মার আকাঙ্ক্ষিত পুত্ররূপে। ১৯৫২ সালের মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে মেধানুসারে হন ত্রয়োদশ। ১৯৫৪ সালে আই. এ. পরীক্ষায় মানবিক বিভাগে করেন সপ্তম স্থান। এরকম ফলাফল অবশ্যই গর্ব ও গৌরবের। নিশ্চিত ও লোভনীয় পেশার বিষয়ে পড়ার জন্য দারুণ সহায়ক। কিন্তু আবু হেনা সকলপ্রকার বৈষয়িক ভাবনা ও হাতছানিকে উপেক্ষা করেন। নিজের মন কী চাই, গুরুত্ব দেন সেদিকে। সিদ্ধান্ত নেন সাহিত্য নিয়ে পড়ার এবং সেটা বাংলাতেই। এ যেন, 'বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর।'