![](https://media.priyo.com/img/500x/https://www.deshrupantor.com/assets/news_images/2023/09/21/ar-raji.jpg)
শ্রেণিবিভাজিত রাষ্ট্রে সর্বজনীন শিক্ষা!
জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থার যে উদ্দেশ্য, সেটা বাস্তবায়নের যে প্রক্রিয়া, আমরা কিন্তু দেশের সব মানুষকে প্রকৃতভাবেই শিক্ষিত করতে চাই। মানুষ এমনভাবে শিক্ষিত হবে যাতে সেই ব্যক্তি তার মর্যাদাবোধ, আত্মসম্মান রক্ষা করতে পারে এবং দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারে। বড় কথা হচ্ছে, প্রকৃতির সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ায় সে যেন থাকতে পারে। মোদ্দা কথা হচ্ছে, সামাজিক এবং রাষ্ট্রিক জীবনযাপন করতে পারে। এটাই তো প্রকৃত শিক্ষা। আমাদের শিক্ষার মূল ধারণা ছিল, যেটা আমাদের সংবিধানেরও মূল কথা সর্বক্ষেত্রে সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সমতা থাকতে হবে। সর্বোপরি মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্যই আমরা চাইছিলাম, শিক্ষাগ্রহণের শুরুতেই লেখাপড়া এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেন কোনো ধরনের বৈষম্য তৈরি না হয়। কিন্তু সেটা আমরা রক্ষা করতে পারিনি। অনেক আগেই শিক্ষায় বৈষম্য তৈরি হয়ে গেছে। শহরে আবার কিন্ডারগার্টেন, ইংরেজি মাধ্যম, সরকারি-বেসরকারি, বিদেশি নিয়ন্ত্রিত স্কুল অসংখ্য।
একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আরেকটার শিক্ষা পদ্ধতির কোনো মিল নেই। আবার আরেকটা বড় ধরনের পার্থক্য তৈরি হয়ে গেছে ভাষার ক্ষেত্রে। একদিকে ইংরেজি আরেকদিকে আরবি-উর্দু। মাদ্রাসাগুলোতে তো একটা মিশ্র শিক্ষা পদ্ধতি চলছে। এর সবকিছুই একটা জগাখিচুড়ি মতোন অবস্থা। যে কারণে দেশের সব মানুষের জন্য একইরকম শিক্ষা পদ্ধতি চালু করতে পারছি না। অথচ সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা যে চালু করা যেত না তা কিন্তু নয়। আমি মোটেও বলছি না, শিক্ষাব্যবস্থায় বৈচিত্র্য থাকা খারাপ। কিন্তু এসব কীভাবে চলছে, তা তদারকির জন্য রাষ্ট্রের একটা তদারকির দরকার ছিল। আমাদের সমাজে পিছিয়ে পড়া বিশাল সংখ্যার মানুষ কীভাবে ‘উন্নত শিক্ষা’ পাচ্ছে, তাদের বিষয়ে রাষ্ট্রের যে বিনিয়োগ দরকার ছিল তা করা হয়নি। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে। এখনো শিক্ষাক্ষেত্রে জিডিপির ২ শতাংশেরও কম বিনিয়োগ। আমাদের লক্ষ্য কিন্তু ছিল, ৪ শতাংশ। অথচ তা হলো না। ফলে গোড়াতেই তো একটা বিশাল বৈষম্য রয়েছে। এখন শিক্ষার্থীরা ‘বিজ্ঞান’ কীভাবে শিখবে সেটা নিয়েই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তুলে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন শাখা। এর ফলে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রকৃত গুরুত্ব কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। বলা যায়, মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষা নিয়ে এক ধরনের জগাখিচুড়ি তৈরি হয়েছে। নতুন শিক্ষা পদ্ধতিতে মাধ্যমিক পর্যায়ে উচ্চতর গণিতের প্রতি অবহেলা, বিজ্ঞানের প্রতি অবহেলার পরও, এর মধ্য দিয়েই আমরা একটা শিক্ষিত শ্রেণি গড়ে তুলতে চাচ্ছি। বিশেষ করে, বাংলা মাধ্যমে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় আমরা শুধু কর্মী তৈরি করতে পারব। কোনো নেতৃত্ব তৈরি হবে না, সৃষ্টিশীল মানুষ তৈরি হবে না, ভালো মানুষ তৈরি হবে না। কেবলমাত্র কারখানার কর্মী তৈরি হবে।