জাল ভোট প্রতিরোধ অপর্যাপ্ত ব্যবস্থা
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারির শুরুতে নির্বাচনের সম্ভাবনা দেখছে এবং সুবিধামতো সময়ে তফসিল ঘোষণার কথা ভাবছে। ২০০৬ সালেও নির্বাচন কমিশন একই রকম ভেবেছিল। সেই নির্বাচন সময়মতো হয়নি, শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে দুই বছর পর হয়েছে। আমার বিশ্বাস, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনও হবে না, হতে হবে। সেটি সুষ্ঠু দলনিরপেক্ষ প্রশাসনের অধীন সন্ত্রাসমুক্ত ও অংশগ্রহণমূলক হবে, না অন্য কোন পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ায় হবে, তা আমরা কেউ জানি না। বিবেকবান ও শান্তিপ্রিয় সব মানুষের প্রত্যাশা, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন জন-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হবে।
দলীয় সরকার, দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং সর্বদলীয় জাতীয় সরকার—এসব বৃহত্তর রাজনৈতিক বিষয় রাজনীতির জন্য আপাতত তুলে রেখে ভোট ব্যবস্থাপনার কতিপয় ছোট ছোট বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই। কারণ নির্বাচন যে ধরনের সরকারের অধীনেই হোক, নির্বাচন ব্যবস্থাপনার কিছু খুঁটিনাটি বিষয় সর্বত্র সব সময় সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। দলনিরপেক্ষ সরকার এবং নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার সমতল ভূমি সত্ত্বেও কিছু সাধারণ বিষয়ে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না থাকলে শত বজ্র আঁটুনির পরও দুই-একটি ফসকা গেরো সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নিজ নিজ দলের পক্ষে জাল ভোট দেওয়া এবং ভোট কারচুপি ফৌজদারি অপরাধ হলেও নৈতিক অপরাধ মনে করা হয় না। তাই সুযোগ পেলে ডান-বাম, ইসলামি সেক্যুলার ও দল-নির্দল সবাই সুযোগমতো অনিয়মের সুযোগ নিতে পিছপা হয় না।
বিগত দিনে ড. শামসুল হুদা কমিশন সেনাবাহিনীর সহায়তায় ছবিযুক্ত ডিজিটাল ভোটার তালিকা সফলভাবে প্রস্তুত করে এবং আরও পরে ইভিএম চালুর সফল পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করে। সেই ইভিএমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা কাজী রকিব কমিশন এবং পরের নূরুল হুদা কমিশনও চালিয়ে যায়। কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন ইভিএম ব্যবহার করে অনেক স্থানীয় নির্বাচন করার পরও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনদাবির মুখে ইভিএম পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। কারণ দেশের সব বিরুদ্ধপক্ষীয় রাজনৈতিক দল ও শক্তি ইভিএম প্রত্যাখ্যান করে। অপরদিকে সরকারও আর্থিক সংকটের মুখে নতুন ইভিএম মেশিন কেনায় অসমর্থ। সে কারণে ইভিএমের মাধ্যমে পুরো ভোট গ্রহণ পদ্ধতি এখন পরিত্যক্ত। শক্তিশালী বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষ না থাকায় একতরফা নির্বাচনের বুথে ‘ভোট ডাকাত’ ঢুকে পড়েছিল এবং ভোটার শনাক্তের পর পোলিং বাটন নিজেরা টিপে দিয়ে ‘ডাকাত-পছন্দ’ প্রার্থীর পক্ষে ভোট দেওয়া হয়েছে বলে ব্যাপক অভিযোগ আসে। ইভিএম মেশিনে ভোট গ্রহণের আরও কিছু ত্রুটি ছিল। এর মধ্যে ছিল ভোট প্রদানে বিলম্ব, ফলাফলে ডিজিটাল কারচুপির অভিযোগ, মেশিনস্বল্পতা, আঙুলের ছাপ না মেলায় ভোটারের ভোগান্তি প্রভৃতি।