আর্থিক সংকটের সময় দেশে বিলিয়নেয়ার আরো বেড়েছে
লাগামহীন মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, ক্ষয়িষ্ণু রিজার্ভ, রেমিট্যান্সে ভাটাসহ সামষ্টিক অর্থনীতির নানামুখী সংকটের মুখে রয়েছে বাংলাদেশ। প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে সরকার ও সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। এমন অবস্থায়ও একশ্রেণীর মানুষের ধনসম্পদ আরো ফুলে-ফেঁপে উঠছে। সুইজারল্যান্ডের ইউবিএস ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ২৬ জনের বেশি বাংলাদেশী শতকোটি টাকা বা তার বেশি সম্পদ অর্জন করেছে।
এক বছরের বেশি সময় ধরে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে। সর্বশেষ গত আগস্টে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। ডলার সংকটের কারণে চাহিদা অনুসারে আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। এতে আমদানির পরিমাণ কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। ফলে উৎপাদনমুখী শিল্পের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ক্রমাগত ক্ষয়ের কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি ক্রমেই নাজুক হয়ে উঠছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে (বিপিএম৬) দেশের রিজার্ভ এখন ২ হাজার ১৭০ কোটি ডলার বা ২১ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান খাত রফতানিতে গত অর্থবছরে প্রত্যাশিত হারে প্রবৃদ্ধি হয়নি। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম আরেক খাত রেমিট্যান্স পরিস্থিতিও আশাব্যঞ্জক নয়। গত অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে নামমাত্র প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমেছে। দেশের ব্যাংক খাতের পরিস্থিতিও নাজুক। সুশাসনের ঘাটতির পাশাপাশি খেলাপি ঋণ খাতটির জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছর শেষে দেশের ব্যাংক খাতে পুনঃতফসিলকৃত ঋণের স্থিতি ২ লাখ ১২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ১৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। তবে অর্থনীতির এসব সংকটের আঁচ লাগছে না দেশের বিলিয়নেয়ারদের গায়ে।
আইন ও সংবিধানের ভিত্তিতে আমানতকারীদের তথ্য সুরক্ষিত ও গোপন রাখতে পারে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলো। যেকোনো অবস্থায়ই ব্যাংকগুলো থেকে আমানতকারীর গোপন তথ্য পাওয়া অসম্ভব। এজন্য বিশ্বের ধনীদের কাছে বৈধ-অবৈধ পন্থায় অর্জিত অর্থ জমা রাখার জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় গন্তব্য সুইজারল্যান্ড। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা গোপন আমানত জমা রাখতে সেখানে গড়ে উঠেছে তিন শতাধিক বেসরকারি ব্যাংক। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্যাংকটি হলো ক্রেডিট সুইস। ১৬৬ বছর ধরে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালিয়ে আসা প্রতিষ্ঠানটি এখন বিশ্বব্যাপী গোপন অর্থ আমানতের সবচেয়ে বড় গন্তব্যগুলোর একটি।