ইসলামী ব্যাংকিং : আদর্শ থেকে দুর্দশাগ্রস্ত
গত চার দশকে ইসলামী ধারার ব্যাংকিংয়ে বড় সাফল্য পেয়েছে মালয়েশিয়া। দেশটির আধুনিক অর্থনীতির ভিত তৈরিতে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার ভূমিকা ছিল যুগান্তকারী। মালয়েশিয়ার মতো বাংলাদেশেও এ সময়ে ইসলামী ধারার ব্যাংকিং দ্রুত জনপ্রিয় হয়েছে। কিন্তু অর্থনীতিতে কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা রাখার আগেই আস্থার সংকটের মুখে পড়েছে ইসলামী ধারার ব্যাংকিং। আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে এ ধারার ব্যাংকিং এখন দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় পতিত হয়েছে।
বাংলাদেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের সূচনা হয়েছিল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের হাত ধরে। ১৯৮৩ সালে কার্যক্রম শুরু করা প্রতিষ্ঠানটির সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশে গড়ে উঠেছে আরো নয়টি পূর্ণাঙ্গ ধারার ইসলামী ব্যাংক। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ছাড়াও এ ধারার অন্য ব্যাংকগুলো হলো সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। এর মধ্যে পাঁচটিই প্রচলিত ধারা থেকে ইসলামী ধারায় রূপান্তর হয়েছে। প্রচলিত ধারার ১১টি ব্যাংক চালু করেছে ইসলামী ব্যাংকিং শাখা। আরো ১৪টি প্রচলিত ধারার ব্যাংক উইন্ডো চালুর মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত তিন দশকে প্রচলিত ধারার ব্যাংকিংয়ের চেয়ে ইসলামী ধারার ব্যাংকিংয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় দ্বিগুণ। কিন্তু প্রথমবারের মতো গত এক বছরে এ ধারার ব্যাংকগুলো পিছিয়ে পড়েছে। এ সময়ে প্রচলিত ধারার ব্যাংকিংয়ের চেয়ে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে অনেক কম।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২২ সালের জুন থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এক বছরে ইসলামী ধারার ব্যাংকিংয়ে আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ২ দশমিক ১৩ শতাংশ। অথচ এ সময়ে দেশের ব্যাংক খাতে আমানতের গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৪০ শতাংশের বেশি। চলতি বছরের জুন শেষে ইসলামী ধারার ১০টি ব্যাংকে জমাকৃত আমানতের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা, যা দেশের ব্যাংক খাতের মোট আমানতের প্রায় ২৫ শতাংশ। মূলত আস্থার ঘাটতি তৈরি হওয়ার কারণেই ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর আমানতের প্রবৃদ্ধি থমকে গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, আমানতের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব হলে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের অন্য সব সংকট কেটে যেত।
এক বছর আগে ২০২২ সালের জুন শেষে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর হাতে উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল ২১ হাজার ৯ কোটি টাকা। চলতি বছরের একই সময়ে এ ব্যাংকগুলোর উদ্বৃত্ত তারল্য মাত্র ২ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। ইসলামী ধারার বেশির ভাগ ব্যাংকই এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ অন্য ব্যাংকগুলো থেকে ধার করে চলছে।