বিশ্বব্যাপী পুঁজি ও সম্পদের উৎপাদন এবং বণ্টন সম্পর্কিত যেই ধ্রুপদী সংকট জনসাধারণকে বুঝাইতে গিয়া সমাজতন্ত্রীরা কয়েক শতাব্দী ধরিয়া গলদ্ঘর্ম হইয়াছেন; বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা যেন উহা বিনাক্লেশে হাতেকলমে প্রমাণ করিয়া দিতেছে।
রবিবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠিয়া আসিয়াছে, রাজধানীসহ নগরাঞ্চলগুলি চাহিদা অনুযায়ী মোটামুটি বিদ্যুৎ পাইলেও গ্রামাঞ্চলে অসহনীয় হইয়া উঠিয়াছে বহুল আলোচিত ‘লোডশেডিং’। আলোচ্য প্রতিবেদনসূত্রে জানা যাইতেছে, কোনো কোনো অঞ্চলে ৬ হইতে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকিতেছে না। পরিস্থিতি কতটা সঙ্গিন; চট্টগ্রামের আনোয়ারায় গত বুধবার অন্তত ১৫ বার বিদ্যুৎ আগমন-নির্গমনের মধ্য দিয়া উহার খণ্ডচিত্র উঠিয়া আসিয়াছে। আমাদের প্রশ্ন– নাগরিক সুযোগ-সুবিধা হইতে এমনিতেই বঞ্চিত ও পশ্চাৎপদ ‘মফস্বল’ কোন আদি পাপে বিদ্যুতেও বৈষম্যের শিকার হইবে?
স্মর্তব্য, বিদ্যুৎ বৈষম্য শুধু আঞ্চলিক বঞ্চনার বিষয় নহে; দেশের সামগ্রিক উৎপাদন ব্যবস্থার প্রশ্ন। গত কয়েক বৎসর ধরিয়া মফস্বল এলাকায় বিদ্যুৎনির্ভর যেই ব্যবসা-বাণিজ্য, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, কলকারখানা, রপ্তানিমুখী খামার, কৃষি উদ্যোগের প্রসার ঘটিয়াছিল; বিদ্যুতের বিড়ম্বনায় ঐ সকল উদ্যোগ ইতোমধ্যে বিপাকে পড়িয়াছে। উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি করিয়াও টিকিয়া থাকা যখন কঠিন হইতে কঠিনতর; অনেকে ছাঁটাইয়ের ‘সহজ’ পথ বাছিয়া লইতেছেন। সমকালের প্রতিবেদকগণ দেখিয়াছেন, বিদ্যুৎনির্ভর সেচের সংকটে কীভাবে আমনক্ষেত ফাটিয়া চৌচির! আমাদের আশঙ্কা, বাছিয়া বাছিয়া লোডশেডিং চাপাইবার মাশুল খাদ্য নিরাপত্তায় গিয়া ঠেকিবে কিনা?
- ট্যাগ:
- মতামত
- বিদ্যুৎ সরবরাহ
- বৈষম্য
- ব্যবস্থাপনা