ব্রিকসে বাংলাদেশ নেই কেন?
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবচেয়ে বেশি চর্চিত বিষয়, নিঃসন্দেহে, ব্রিকসের নতুন সদস্য তালিকায় বাংলাদেশের নাম না থাকা। বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত বিশ্বের উদীয়মান অর্থনীতির এ জোটের ১৫তম শীর্ষ সম্মেলনে ছয়টি দেশকে এর সদস্য হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রত্যাশা জাগিয়েও বাংলাদেশ সেখানে স্থান করে নিতে পারেনি। এটা যেমন সরকার সমর্থকদের জন্য কিছুটা হলেও হতাশার বিষয়, তেমনি বিরোধী শিবিরের জন্য একপ্রকার মওকা। সরকার সমর্থকরা যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করছেন যে, ভূরাজনৈতিক কৌশলের কারণে– বিশেষত আসন্ন নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে সরকারের চলমান টানাপোড়েনের মধ্যে– বাংলাদেশ সরকার নিজেই ব্রিকসে ঢোকার জোরালো দেনদরবার থেকে বিরত থেকেছে। অন্যদিকে বিরোধীরা বলছে, এ ঘটনা প্রমাণ করে, আন্তর্জাতিক পরিসরেও আওয়ামী লীগ সরকার বন্ধুহীন হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে মূলধারার সংবাদমাধ্যমও বিষয়টি নিয়ে চুপচাপ থাকতে পারে না; তাই সেখানেও চলছে বিশ্লেষকদের মতামতের ভিত্তিতে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
প্রথমেই বলে নেওয়া দরকার– জনসংখ্যা, ভৌগোলিক আয়তন এবং অর্থনৈতিক আকারের দিক থেকে ব্রিকস বর্তমান বিশ্বের একটি শক্তিশালী জোট। ২০১৪ সালের হিসাবে, প্রায় ৩২০ কোটি মানুষ নিয়ে ব্রিকসের পাঁচটি সদস্য দেশ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ ধারণ করে। ভৌগোলিকভাবে এরা পৃথিবীর ২৫ শতাংশ এলাকায় ছড়িয়ে আছে এবং বৈশ্বিক জিডিপির প্রায় ২৫ শতাংশও এ দেশগুলোর। বর্তমানে ব্রিকস সম্মিলিতভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ৪৩ শতাংশ (আট ট্রিলিয়ন ডলার) নিয়ন্ত্রণ করে। বিশ্বের মোট পণ্যসেবার ২১ শতাংশ আসে এই পাঁচ দেশ থেকে। আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, ব্রিকস দেশগুলো বহুদিন ধরেই নিজস্ব মুদ্রায় লেনদেন, ব্রিকস মুদ্রা প্রবর্তন এবং নিজস্ব রিজার্ভের কথা বলে আসছে। এতে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুদ্রা এবং বিশ্বব্যাপী মার্কিন আধিপত্যের অন্যতম হাতিয়ার বলে পরিচিত ডলারের ওপর নির্ভরতাও কমবে। বাংলাদেশের মতো নিজস্ব ধারায় চলতে চাওয়া দেশের জন্য এটা অত্যন্ত জরুরি।
দ্বিতীয়ত, বিশেষত গত দেড় দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার যে হারে বেড়েছে তা বিশ্বের প্রায় সব মহলেরই নজর কেড়েছে। মাথাপিছু আয়ে তো এরই মধ্যে ভারতের মতো বর্তমানে বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতি– যে কিনা আর মাত্র চার বছরের মধ্যে তৃতীয় স্থানে উঠে আসবে বলে বিভিন্ন পূর্বাভাস বলছে– এ দেশকেও পেছনে ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশ। এসবের দৌলতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামেও ক্রমশ গুরুত্ব পাওয়া শুরু করেছে বিশ্বের এক নম্বর অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের শাসকদের কাছে একসময় ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে পরিচিত দেশটি। চীন, ভারতের সঙ্গে সার্ক, বিসিআইএম, বিমসটেকের মতো বহু আন্তর্জাতিক ফোরামে বহু বছর ধরেই মঞ্চের আসন পেয়ে আসছে বাংলাদেশ। ফলে ব্রিকসের মতো একটা সম্ভাবনাময় বৈশ্বিক মঞ্চে বাংলাদেশের মানুষের নিজ দেশকে দেখতে চাওয়ার আশা বাতুলতা হতে পারে না। এমনটা বলার আরেকটা কারণ হলো, ব্রিকসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিন দেশ– ভারত, রাশিয়া ও
- ট্যাগ:
- মতামত
- সদস্যপদ
- ব্রিকস সম্মেলন
- ব্রিকস