খাবারে শিশুদের অরুচি কেন
শির ভাগ মায়েরই সাধারণ একটাই অভিযোগ, বাচ্চা খেতে চায় না। এক বেলার খাবার খাওয়াতেই দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা লেগে যায়। এ জন্য মা–বাবা বাচ্চাদের দোকানের প্যাকেটজাত খাবারে অভ্যস্ত করিয়ে ফেলেন। এমন উচ্চ ক্যালরির খাবার খেয়ে বাচ্চা অনেক মুটিয়ে যায়।
বাচ্চাদের খাবারে অরুচি কেন, আসুন কিছু কারণ জানার চেষ্টা করি।
অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়ার অভাব
আমরা যে খাবার খাই, সেগুলো থেকে পুষ্টির শোষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া। এগুলোকে প্রোবায়োটিক বলে। প্রোবায়োটিকসমৃদ্ধ খাবার অন্ত্রে এই ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করতে কার্যকরী। টক দই, ঘোল, পান্তাভাত—এগুলোতে প্রোবায়োটিক আছে। এ ছাড়া গাঁজন প্রক্রিয়ায় তৈরি প্রায় সব খাবারই প্রোবায়োটিকের জন্য সহায়ক।
জিংকের ঘাটতি
শিশুর শরীরে জিংকের ঘাটতি হলে রুচি কমে যায়। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, কলিজা ও বাদাম জিংকের ভালো উৎস। শাকসবজি থেকেও জিংক পাওয়া যায়। তবে প্রাণিজ উৎস থেকে জিংক পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। জিংক ক্ষুধামান্দ্য দূর করার পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সাহায্য করে। জিংকের অভাবে নখ সাদা ও ভঙ্গুর, ত্বক খসখসে ও চুল পড়ে যেতে পারে। জিংক পরিপাকতন্ত্রের ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে খাওয়ার রুচি বাড়াতে সাহায্য করে।
ভিটামিন বি-১২
শিশুদের অরুচির আরেকটি কারণ হতে পারে ভিটামিন বি-১২–এর ঘাটতি। মাছ, মাংস, ডিম, দুধসহ প্রায় সব রঙিন শাকসবজিতে ভিটামিন বি-১২ পাওয়া যায়। তাই প্রতিদিন খাবারে মিশ্র শাকসবজি রাখতে হবে।
লাইসিন অ্যামিনো অ্যাসিড
খাবারের মাধ্যমে যে কয়টি অ্যামিনো অ্যাসিডের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হয়, তার মধ্যে লাইসিন অ্যামিনো অ্যাসিড অন্যতম। লাইসিন ক্যালসিয়ামের শোষণ বৃদ্ধি করে দৈহিক বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। সব ধরনের প্রোটিনজাতীয় খাবারে লাইসিন পাওয়া যায়। এ ছাড়া চালে বেশ লাইসিন পাওয়া যায়। চাল–ডাল দিয়ে খিচুড়ি রান্না খুব কার্যকর।
ভিটামিন ‘ডি’
ভিটামিন ‘ডি’–এর ঘাটতি থাকলে শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি খুব ধীর প্রক্রিয়ায় হয়। এতে বাচ্চার খাওয়ার চাহিদা কমে যায়। ভিটামিন ‘ডি’–এর সবচেয়ে সহজলভ্য উৎস সূর্যের আলো। সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন বাচ্চার শরীরে ১৫ মিনিট করে রোদ লাগাতে হবে।
ভিটামিন ‘সি’
ভিটামিন ‘সি’–এর অভাবেও ক্ষুধামান্দ্য হতে পারে। তাই বাচ্চাকে প্রতিদিন অন্তত একবার ভিটামিন সি সমৃদ্ধ সবজি বা ফল খাওয়াতে হবে।
কৃমির সংক্রমণ
কৃমির সংক্রমণ বাচ্চাদের খাওয়ার রুচি কমায়। শিশুকে বয়স অনুযায়ী নিয়মিত কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে। নিয়মিত হাত–পায়ের নখ কেটে দিন। খাওয়ার আগে–পরে এবং বাথরুম ব্যবহারের পরে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন। বাসি–পচা ও বাইরের খাবার খাওয়াবেন না।
মন্দ অভ্যাস
ছয় মাস বয়সের পর থেকে শিশুদের বাড়ির স্বাভাবিক খাবারে অভ্যস্ত করাতে হয়। একটা নতুন খাবার বাচ্চা তখনই খেতে চাইবে, যখন সেটা তার জিহ্বায় সুস্বাদু মনে হবে। খাবারের স্বাদ বোঝার জন্য জিহ্বায় স্বাদগ্রন্থি জন্মগতভাবে থাকে না। ধীরে ধীরে তৈরি হয়। তাই শুরুতে কোনো খাবার বাচ্চা খেতে না চাইলেও চেষ্টা করে যেতে হবে।
- ট্যাগ:
- স্বাস্থ্য
- অনীহা
- শিশুর বেড়ে উঠা
- খাবার খাওয়া