লক্ষ কোটি টাকার শুল্ক অব্যাহতি কার স্বার্থে
বণিক বার্তার ১৩ আগস্টের সংবাদ প্রতিবেদনের তথ্য জানাচ্ছে যে ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দেশের বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তাদের যথাক্রমে ৫২ হাজার কোটি ও ৬১ হাজার কোটি টাকা শুল্ক অব্যাহতি দিয়েছে, যার সম্মিলিত পরিমাণ ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ অব্যাহতির পরিমাণ ১৮ শতাংশ বেশি। উল্লিখিত শুল্ক অব্যাহতি প্রধানত যেসব খাতে দেয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি, ভোজ্যতেল, পোলট্রি, চাল, তৈরি পোশাক ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে ভর্তুকি প্রদানের কথিত উদ্দেশ্য ছিল এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট খাতের সাধারণ ভোক্তাদের জীবনযাপনের কষ্টকে উপশম দেয়া। কিন্তু ওই ভর্তুকির মাধ্যমে সাধারণ ভোক্তাদের কষ্টের উপশম হওয়া তো দূরের কথা, দিনে দিনে তা আরো বেড়েছে। অথচ কষ্ট উপশমের নামে শুল্ক অব্যাহতি নিয়ে রাতারাতি এরা মুনাফার পাহাড় গড়েছেন।
সরকার এদের শুল্ক অব্যাহতি দিয়েছে যাতে সয়াবিনের মূল্য সাধারণ ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে, ডিমের দাম না বাড়ে, শ্রমজীবী মানুষ স্বল্প মূল্যে চাল কিনে খেতে পারে, বিদ্যুতের মূল্য এক-দুই মাস পরপর সমন্বয় (আসলে বৃদ্ধি) করতে না হয় ইত্যাদি। কিন্তু উল্লিখিত শুল্ক অব্যাহতিদানের মাধ্যমে এসবের কিছুই যে ঘটেনি, তা শুধু এখন তথ্য নয়, সাধারণ মানুষের নিত্যদিনের অবর্ণনীয় কষ্ট ও অসহনীয় দুর্ভোগেরই নামান্তর। অথচ বাস্তবতা হলো, যে পরিমাণ শুল্ক অব্যাহতি উল্লিখিত উদ্যোক্তাদের দেয়া হচ্ছে, তা পোষানোর জন্য সমপরিমাণ বা তার চেয়েও বেশি পরিমাণ রাজস্ব সাধারণ মানুষের কাছ থেকে নতুনভাবে করারোপের মাধ্যমে আদায় করে নেয়া হচ্ছে। ফলে বিষয়টি দাঁড়াচ্ছে এই যে জনগণের জীবনযাপনকে সুখপ্রদ করার নামে আসলে তাদেরই শোষণ করে ধূর্ত বণিকরা শুধু নিজেদের আখেরই গোছাচ্ছেন না, সাধারণ মানুষের জীবনযাপনকেও অসহনীয় করে তুলছেন এবং এক্ষেত্রে সবচেয়ে কষ্ট ও হতাশার বিষয় এই যে এটি ঘটছে রাষ্ট্রেরই প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায়।
- ট্যাগ:
- মতামত
- শুল্ক
- জাতীয় রাজস্ব বোর্ড
- অব্যাহতি