ব্যাংক খাতের সবচেয়ে ক্ষতের বছর কি ২০২২ সাল
ব্যাংক খাতে ইতিহাসের সর্বোচ্চ নিট মুনাফা দেখানো হয়েছে ২০২২ সালে। আগের বছরের তুলনায় এ সময় দেশের ব্যাংকগুলোর মুনাফার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮৩ শতাংশ। গত ৫২ বছরে খাতটিতে এ পরিমাণ নিট মুনাফা আর কখনই দেখা যায়নি। যদিও এ সময় পুনঃতফসিল করা হয়েছে খেলাপি হতে যাওয়া ৬৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ। তার পরও বছর শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার বেশিতে। প্রভিশন বা সঞ্চিতি ঘাটতিও ১১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর পরও বছর শেষে ব্যাংক খাতে নিট মুনাফা দেখানো হয়েছে ১৪ হাজার কোটি টাকার বেশি, যার সিংহভাগই আবার লভ্যাংশ হিসেবে বের করে নিয়েছেন মালিকরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২১ সালে ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফা ছিল ৫ হাজার ২০ কোটি টাকা। কিন্তু এক বছরের ব্যবধানে গত বছর ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফা ১৪ হাজার ২৩০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। সে হিসেবে নিট মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮৩ শতাংশের বেশি। কভিডের আগের বছর ২০১৯ সালে ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফা ছিল ৬ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। এরপর ২০২০ সালে তা দাঁড়ায় ৪ হাজার ৬৬০ কোটি টাকায়। মূলত প্রভিশন বা সঞ্চিতি বাবদ কম অর্থ সংরক্ষণের কারণেই এ সময়ে ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফায় অস্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
মুনাফায় ব্যাপক উল্লম্ফনের এ বছরটিতে ব্যাংক থেকে পরিচালকদের ঋণ গ্রহণও বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ি, ব্যাংক থেকে নেয়া পরিচালকদের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা। তবে পরিচালকদের নিজের নাম ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে নেয়া এ ঋণের চেয়েও বেনামি ঋণ বেশি বলে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। আবার পরিচালকদের নেয়া ঋণই দফায় দফায় পুনঃতফসিল করছে ব্যাংকগুলো। গত বছর যেসব ঋণ পুনঃতফসিল হয়েছে, তার উল্লেখযোগ্য অংশের সুবিধাভোগীও ব্যাংক পরিচালকরা। এ সময় পণ্যের দাম বেশি দেখিয়ে (ওভার ইনভয়েসিং) সামর্থ্যের বাইরে আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খুলেছে ব্যাংকগুলো, যার অনেকগুলোই ছিল ব্যাংক পরিচালকদের স্বার্থের অনুকূলে। এসব এলসি দায় পরিশোধ করতে গিয়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও টান পড়েছে।