ব্যবসায়ীদের লাভের চাপে চ্যাপ্টা মানুষ
উৎপাদন কমেনি, চাহিদাও বাড়েনি। অথচ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চোখে ধুলো দিয়ে নিত্যপণ্য ব্যবসার আড়ালে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিচ্ছেন ব্যবসায়ী-আমদানিকারকেরা। আধিপত্য আর প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে গত দুই অর্থবছরে কৃষিজাত পণ্য ও সেবা, ভোজ্যতেল, চিনি আর মৎস্য-পোলট্রি খাত রাজস্ব-সুবিধা নিয়েছে প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা। বাজারে এসব পণ্যের দাম তো কমেইনি, বরং নানা অজুহাতে বেশি মুনাফা করে ভোক্তার পকেট হাতিয়ে নিয়েছেন আরও কয়েক হাজার কোটি টাকা। প্রণোদনা, ঋণপত্র খোলা, ব্যাংকঋণসহ আরও বিভিন্নভাবে সরকারি সুবিধা তো আছেই। অসহায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, নামমাত্র অভিযান আর আমদানির হুমকি দিয়েই দায়িত্ব শেষ করছে। আর ব্যবসায়ী চক্রের অতিলাভের চাপায় পড়ে প্রতিনিয়ত পিষ্ট হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। দামের কারণে ব্যয় কমাতে অনেকে তালিকা কাটছাঁট করছেন। বাজারে নৈরাজ্যের জন্য অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকেরা দুর্বল বাজার ব্যবস্থাপনা ও একটি চক্রের কারসাজিকে দায়ী করেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে জানা যায়, গত দুই বছরে মানুষের আয় না বাড়লেও এ সময়ে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১৭ শতাংশের বেশি। অর্থাৎ দুই বছর আগে মানুষ কোনো পণ্য ১০০ টাকায় কিনলেও এ বছরের জুলাই মাসে ওই একই পণ্য তাকে ১১৭ টাকায় কিনতে হয়েছে। এটা হলো সরকারি হিসাব। বাস্তবে মূল্যস্ফীতি আরও অনেক বেশি। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে ত্যক্ত-বিরক্ত-ক্ষুব্ধ হলেও বাজার ব্যবস্থাপনা, পণ্যের দাম আর ব্যবসায়ীদের মর্জির ওপর অসহায় আত্মসমর্পণ ছাড়া কার্যত মানুষের আর যেন কিছুই করার নেই।
মানুষের কষ্টের জীবনের খণ্ডচিত্র
বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা মো. আবদুর রহিম (ছদ্মনাম)। বেতন পান ৮০ হাজার টাকা। দুই ছেলে, স্ত্রী ও বৃদ্ধ মাকে নিয়ে থাকেন রাজধানীর মগবাজারে। জীবনযাত্রার ব্যয় এত বেড়েছে যে এ টাকায় এখন আর কুলাতে পারছেন না। প্রতি মাসেই ধার করতে হচ্ছে। বাসাভাড়া ২৫ হাজার টাকা। বড় ছেলের প্রতি মাসের সেমিস্টার ফি ১০ হাজার টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতসহ হাতখরচ ৬ হাজার টাকা। ছোট ছেলের যাতায়াত খরচসহ স্কুল ফি ৭ হাজার টাকা। মায়ের চিকিৎসা ও ওষুধে খরচ ১৩ হাজার টাকা। চালে খরচ প্রায় ২ হাজার ৬০০ টাকা। মাছ-মাংস-ডিম-সবজিসহ যাবতীয় মুদি মালে খরচ ১৫ হাজার টাকা। গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ও ডিশ-ইন্টারনেট বিল ৮ হাজার টাকা। এতেই বেতনের টাকা শেষ। নিজের যাতায়াত, হাতখরচ, স্টেশনারি তো আছেই। ঘাটতি মেটাতে তিনি এখন একটি এফডিআর ভেঙে খাচ্ছেন। আবদুর রহিমের মতো এ রকম অসংখ্য মানুষের গল্প প্রায় একই রকম। এখন আর মধ্যবিত্ত বা দরিদ্র মানুষ বলে নয়, প্রায় সবাই নিত্যপণ্যের বাড়তি দামের চাপে পিষ্ট হচ্ছেন।