বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২২ সালের ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট উদ্ধৃত করিয়া বুধবার সমকালের এক প্রতিবেদনে যাহা বলা হইয়াছে, উহাতে স্পষ্ট বোঝা যায়– দেশের ব্যাংক খাত খাদের কিনারায় অবস্থান করিতেছে। প্রতিবেদন অনুসারে, দেশের ১১টি ব্যাংক রহিয়াছে মূলধন ঘাটতিতে। উপরন্তু বিদ্যমান খেলাপি ঋণ আর মাত্র ৩ শতাংশ বাড়িলে আরও ২১টি ব্যাংক একই ঘাটতিতে পড়িবে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২০১৯ সালের নির্দেশনা অনুসরণ করিলে সংকটগ্রস্ত ব্যাংকের তালিকায় এখনই ১৬টি ব্যাংককে রাখা যায়। একটা ব্যাংকের ঝুঁকি সহনশীলতা নিশ্চিত করিবার স্বার্থে আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং নীতিমালা ব্যাসেল-৩ অনুসারে, প্রতিষ্ঠানটির ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের অন্তত ১০ শতাংশ সংরক্ষণ করিতে হয়, যেই ক্ষেত্রে ১১টি ব্যাংক ব্যর্থ। আর ২০১৯ সালের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক অতিরিক্ত আড়াই শতাংশ আপৎকালীন সুরক্ষা মূলধন (সিসিবি) রূপে রাখিবার বিধান জারি করিয়াছে, যাহার মান্যতা দিতে অন্তত আরও পাঁচটি ব্যাংক ব্যর্থ। একটা ব্যাংকের মূলধন ঘাটতিতে থাকার অর্থ উহার আর্থিক ব্যবস্থাপনা দুর্বল; ঋণদানের সামর্থ্যও সীমিত। এই সকল নিয়ামকের অনিবার্য নেতিবাচক প্রভাব পড়িবে নূতন বিনিয়োগে। এই ধরনের ব্যাংকের উপর আমানতকারীর আস্থাও দুর্বল হয়। একই কারণে ব্যাংকের আন্তর্জাতিক লেনদেনেও নানা চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়, যাহার ভুক্তভোগী দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি।
বিশ্বখ্যাত ঋণমান সংস্থা মুডিস বাংলাদেশের ঋণমান এক ধাপ কমাইয়া দিয়াছে এবং এসঅ্যান্ডপি তাহাদের আউটলুকে বাংলাদেশের অবস্থা ‘স্থিতিশীল’-এর পরিবর্তে ‘নেতিবাচক’ বলিয়া উল্লেখ করিয়াছে। এই কারণে বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, আমদানি ব্য়য় বৃদ্ধি, তৎসহিত বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ, এমনকি বিনিয়োগপ্রাপ্তিও কঠিন হইয়া পড়িবে। তীব্র ডলার সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ বহুবিধ সংকটে নিপতিত দেশের অর্থনীতির জন্য তাই ব্যাংক খাতের দুরবস্থায় অতিরিক্ত উদ্বেগ সৃষ্টি হওয়াই স্বাভাবিক।