বঙ্গ-শিশুতীর্থের অয়োময় উন্মেষ
আধুনিক মানবসভ্যতার ইতিহাসে বর্বরতম হত্যাযজ্ঞের চরম কলঙ্কময় এক নজিরবিহীন যন্ত্রণাকাতর দিন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। এই দিনে পরাজিত অশুভশক্তির কূটচক্রান্তের শিকার হয়েছিলেন বিশ্বের নিপীড়িত-নিষ্পেষিত-বঞ্চিত-গণমানুষের অবিসংবাদিত, আকাশচুম্বী, জনপ্রিয়, কিংবদন্তি নেতা, মহাকালের মহানায়ক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানÑ যে নেতার জন্ম না হলে বাঙালি জাতিসত্ত্বা বিকশিত হওয়ার নির্ভার ক্ষেত্র রুদ্ধ হয়ে যেত এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় অসম্ভব ছিল। বঙ্গমাতা ও ‘বঙ্গশিশু’ শেখ রাসেলসহ তাকে প্রায় সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে পর্যুদস্ত করার নীলনকশার বাস্তবায়নই ছিল ঘাতকদের কদর্য উদ্দেশ্য। ৩০ লাখ শহীদের রক্তে রঞ্জিত লাল-সবুজের পতাকার স্বাধীন মাতৃভূমির সামগ্রিক উন্নয়নকে অদম্য শক্তিতে এগিয়ে নেওয়ার অগ্রযাত্রাকে রুখে দিতেই হিংস্র নরপশুদের বুলেটে বঙ্গবন্ধুকে শাহাদতবরণ করতে হয়েছিল। আজকের এই দিনে বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা, জাতীয় চার নেতা, বঙ্গবন্ধু পরিবারের সব শহীদান, মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর সেনানিদের স্মৃতি ও সর্বোচ্চ সম্ভ্রম হারানো দুই লাখ জননী-জায়া-কন্যার প্রতি হৃদয়ের গভীরতম শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।
এটি বিশ্বস্বীকৃত সত্য যে, বাঙালির বঙ্গবন্ধু-বিশ্ববন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববাসীর মননবোধে চিরন্তন ও চিরঞ্জীব। তার কোনো মৃত্যু নেই। যতই দিন-কাল-সময়-মাস-বছর অতিক্রান্ত হবে, ততই বঙ্গবন্ধু অধিকতর জ্যোতির্ময় হয়ে বিশ্ব ইতিহাসে নবতর অধ্যায়ে চন্দ্রাতপ রূপ পরিগ্রহ করবেন। প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগের মহিমা এত বেশি গৌরবোজ্জ্বল যে, তা কখনো বিস্মৃত হওয়ার নয়। বিশ্বনন্দিত মহানায়কদের কীর্তিগাথায় বঙ্গবন্ধু অতি উঁচুমার্গের মর্যাদায় সমাসীন আছেন ও থাকবেন। প্রাসঙ্গিকতায় বিশ্বখ্যাত শিল্পী, দার্শনিক ও সাংবাদিক অঁন্দ্রে মারলোর চেতনার অন্তর্নিহিত ধারণা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঘাতকের হাতে শাহাদতবরণ করলেও মুজিব-গান্ধী, গান্ধী-নেহরু, নেহরু-শার্ল দ্য গল প্রমুখ ঐতিহাসিক বিজয়ীদের মাঙ্গলিক মিছিলে অবিনশ্বর কালজয়ী বৈতরণী নির্মাণ করেছেন।’ বঙ্গবন্ধুর শ্রেষ্ঠত্বের অনন্য নান্দনিক দৃষ্টান্ত হলোÑ এই ধরিত্রীর বুকে বদ্বীপখ্যাত বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের শুধু স্বপ্নদ্রষ্টাই ছিলেন না, অসাধারণ ব্যক্তিত্বের সম্মোহনে ধর্ম-বর্ণ-দলমত-ধনী-দরিদ্র্য নির্বিশেষে পুরো বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে হাজার বছরের বাঙালি জাতির আরাধ্য স্বপ্নকে দৃশ্যমান রূপদানে পরিপূর্ণ সার্থক হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে প্রতিষ্ঠার জন্য কোনো অপকৌশল অবলম্বন বা অশুভ পন্থায় শক্তি প্রয়োগের যেমন প্রয়োজন পড়ে না, তেমনি তার অনবদ্য জীবনপ্রবাহের গৌরবদীপ্ত পাঠোদ্ধার মানদণ্ডে অরুন্তুদ প্রচ্ছদ ধূসর-অমলিন করা একান্তই অসম্ভব।
- ট্যাগ:
- মতামত
- ইতিহাস
- মানবসভ্যতা
- গণমানুষ
- হত্যাযজ্ঞ