কপালে লিখে দিন, ‘কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়’
‘ঘর হইতে দুই পা ফেলিয়া’ই মরে গেল নিপা। না; ইউক্রেনের যুদ্ধের বোমা এসে পড়েনি চট্টগ্রামে। কেবল আকাশ থেকে শ্রাবণ মাসের বৃষ্টি ঝরেছে। নিপা পালিত; চট্টগ্রামের হাটহাজারীর কলেজপড়ুয়া মেয়ে। ঘরের মা-বাবা মেয়েটিকে দেখেশুনে এ পর্যন্ত জীবিত রাখতে পেরেছেন। নগরের পিতার সেই সুযোগ হয়নি। বাড়ির বাইরে দোতলা প্লাবন। নিচতলায় ছিল খোলা নালা; সেখানে তো পানি থাকবেই। তার ওপরে দিয়ে বইছিল উন্নয়নের লিকুইড জোয়ার– মুক্তি না পাওয়া বৃষ্টির পানি। এখন কোন পানিতে ডুবে নিপা নামের মেয়েটি মারা গেল– সেই তদন্ত কি করবে কর্তৃপক্ষ? কেন পয়ঃনিষ্কাশনের নালাটি ঢাকা দেওয়া ছিল না; কেনইবা বৃষ্টির পানি রাস্তা অবরোধ করে রাখে; কী তার রাজনীতি-দাবিদাওয়া– সেসব দেখতে তো আসছে না কোনো আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দল। অতএব নিপা পালিতের মা-বাবার জন্য রইল চট্টগ্রাম মেয়রের তরফে এক লাখ টাকার সান্ত্বনা। কিন্তু যে জীবন ফুটতে গিয়ে ঝরে গেল, সেই মেয়েটি কী পেল?
ভাগ্যিস, মৃতদের পক্ষে জীবিতদের দরবারে অভিযোগ জানানোর উপায় নেই। তাহলে নিপা হয়তো জবানবন্দি দিয়ে বলতে পারত এসব কথা: মহামান্য বিচারক, ধর্মাবতার, এই নগর মৃত্যুর মাইনফিল্ড হয়ে আছে। সামান্য নালায় পড়ে আমি মরে গেছি; সত্য। নুহের প্লাবন নয়, মাত্র দু’দিনের বৃষ্টিতে আমার শহর কোমরপানিতে তলিয়ে গেছে; সেটাও সত্য। সেই পানির তলায় দম আটকে মরার অনুভূতি আমি কীভাবে জানাব আপনাদের? সেই অসহ্য কষ্টের কথা কল্পনা করে দমকে দমকে কাঁদছেন আমার মা। আমার ভয়াবহ যন্ত্রণার কথা ভাবতে গেলেই বাবার বুক কেঁপে উঠছে। আমার শহরে কনটেইনার এসে পড়ে গাড়ির ওপর। ভাগ্যক্রমে গাড়ির আরোহী পরিবারটি শিশুসহ বেঁচে গেলেও, পাহাড় ধসে মরে গেছে আরও কয়েকজন। তারপরও, ধর্মাবতার কী বলবেন? কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়?