এই সরকারকে যেতেই হবে...কীভাবে যাবে
সত্তরের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে, এই তথ্য পাকিস্তানিদের কাছে থাকলে নির্বাচনটি নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হতো কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশের যথেষ্ট কারণ আছে। আওয়ামী লীগ তথা শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে ক্ষমতা দেওয়ার ব্যাপারে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অনীহার বিষয়টি রাজনীতিসচেতন মহলে খুব অস্পষ্ট ছিল বলে মনে হয় না। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে ভালো করবে কিন্তু সেটা যে সরকার গঠনের মতো ভালো হবে, সেটা বুঝতে পারলে নির্বাচন ভণ্ডুল করার ব্যবস্থা হয়তো করা হতো।
আমরা যারা তখন ছাত্র আন্দোলনের তরুণ কর্মী, কিন্তু আওয়ামী লীগ করিনি, তারা তো দূরের কথা, আমাদের অনেক নেতার কাছেও সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একচেটিয়া বিজয়ের বিষয়টি খুব বিবেচনায় ছিল বলে আমার অন্তত মনে হয়নি। যাঁরা আওয়ামী লীগ করতেন, তাঁরা হয়তো জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন, তবে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলে মাত্র দুটি আসন ছাড়া বাকি সব আসন আওয়ামী লীগের দখলে যাবে, এতটা হয়তো তাঁরাও আশা করেননি। প্রসঙ্গত, কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা এখানে বলা যেতে পারে। আমার নিজের নির্বাচনী এলাকা পঞ্চগড়ে আওয়ামী লীগ ছাড়াও একাধিক প্রার্থী ছিলেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর চেয়ে অন্য প্রার্থীরা হয়তো অধিক যোগ্যতরও ছিলেন। আমরা ছিলাম ন্যাপের প্রার্থী অ্যাডভোকেট গোলাম রহমানের পক্ষে। তিনি ছিলেন একজন ঝানু আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ। নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করতে পারেননি। জিতেছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোশাররফ হোসেন চৌধুরী। সে জন্য স্বাভাবিকভাবে আমাদের কিছুটা মন খারাপ হয়েছিল। আমরা আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ভোট দিতে বলিনি। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থাও আমাদের এলাকায় ন্যাপের চেয়ে ভালো ছিল না। তবে নির্বাচনী প্রচারের সময়ই আমরা টের পেয়েছিলাম যে নৌকার পক্ষে একটি স্বতঃস্ফূর্ত জোয়ার তৈরি হয়েছে। মানুষ প্রার্থী দেখে নয়, মার্কা দেখে ভোট দিতে প্রস্তুত হয়েছে।