বৃদ্ধাঙ্গুলের ছাপ বনাম বৃদ্ধাঙ্গুল প্রদর্শন
সাম্প্রতিক সময়ে আদালতে বেশ কিছু রিট পিটিশন দায়ের করা হচ্ছে, যেখানে ঋণগ্রহীতারা এবং ঋণের জামিনদাতারা উভয়ে যথাক্রমে ঋণ গ্রহণ এবং জামিন প্রদান সংক্রান্ত দলিলাদিতে স্বাক্ষর প্রদান করেননি মর্মে উল্লেখ করেছেন- মহামান্য হাইকোর্টের এমন পর্যবেক্ষণ মোতাবেক বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণগ্রহীতা ও জামিনদাতা উভয়ের জন্য বৃদ্ধাঙ্গুলের ছাপ বাধ্যতামূলক উল্লেখ করে সার্কুলার জারি করেছেন। এখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে উদ্ভূত আইনগত জটিলতা নিরসনকল্পে ঋণ প্রদানের উদ্দেশ্যে গৃহীত বা গৃহীতব্য চার্জ ডকুমেন্টসের বিষয়বস্তু ঋণগ্রহীতা এবং জামিনদাতাসহ সংশ্লিষ্ট তৃতীয় ব্যক্তি বা পক্ষকে পড়ে শোনানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে এবং ওই ডকুমেন্টসমূহে স্বাক্ষরের পাশাপাশি তাদের উভয় হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ছাপ (Thumb Impression) জাতীয় পরিচয়পত্রের (NID) জন্য সংরক্ষিত ডাটাবেজ থেকে যাচাইপূর্বক তা গ্রহণ করতে হবে।
সঙ্গত কারণেই আমাদের বিশ্বাস, বাংলাদেশ ব্যাংক এই সার্কুলারটি ইস্যুর মাধ্যমে, অর্থাৎ প্রদত্ত নির্দেশনার মাধ্যমে আশা করছে যে, ভবিষ্যতে ঋণ আদায়ে আর কোনো আইনি জটিলতা তৈরি হবে না এবং ঋণগ্রহীতারা নিয়মিতভাবে তাদের ঋণ পরিশোধ করবেন। বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যাংকসমূহ কী প্রক্রিয়ায় ঋণ বিতরণ করে থাকে তা প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক। দেশের সর্বত্রই যারা ছোটখাটো ব্যবসা করেন বা কৃষি খাতে প্রয়োজনীয় ঋণের জন্য ব্যাংকে যান তাদের সঙ্গে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের আচরণ প্রায়ই আপত্তিকর ধরনের হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে ধরেই নেওয়া হয় যে, ঋণের আবেদনকারী একান্তই অনুগ্রহপ্রাপ্তির জন্য (লঙ্গরখানার চালপ্রাপ্তির মতোই) ব্যাংক ম্যানেজারের কাছে এসেছেন। আর যারা বড় ব্যবসায়ী তারা সরাসরি ব্যাংকের চেয়ারম্যান বা ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঋণ গ্রহণের বিষয়টি ফয়সালা করে কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অনুসারে একটি শাখায় ঋণের আবেদন জমা দেন। সব ক্ষেত্রে ব্যাংকের চেয়ারম্যান বা ব্যবস্থাপনা পরিচালক সংশ্লিষ্ট শাখা ব্যবস্থাপককে মৌখিকভাবে নির্দেশনা প্রদান করেন যেন পরবর্তী বোর্ড সভায় ঋণ প্রস্তাবটি আনা হয়। আবার এ কথাও শোনা যায় যে, অতিশয় দুঃসাহসী এবং আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করা চেয়ারম্যানরা পকেটে করে আবেদনকারীর কাছ থেকে সাদা কাগজে বা ব্যবসায়িক লেটারহেড প্যাডে লেখা ঋণের আবেদন নিয়ে এসে নিচের দিকে ঠেলে দিয়ে বলে থাকেন যে, আগামীকাল বিকালের মধ্যে ঋণের টাকা দিয়ে দেবেন। কাগজপত্র পরে ঠিক করে নিলেই চলবে। বাজারে প্রচলিত এসব তথ্য সত্য নাকি মিথ্যা সে খবর বাংলাদেশ ব্যাংকের জানারই কথা।