গরম কমাচ্ছে উৎপাদনক্ষমতা, বাড়াচ্ছে অর্থনীতির ঝুঁকি
পটুয়াখালীর একটি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে ইমরান শিকদার এক বছর ধরে কাজ করছেন গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায়। ওভার-টাইম করলে মাসে ১৮-২০ হাজার টাকা আয় হয়, তাতে কোনোরকমে চলে যায়। কিন্তু সমস্যা হল, কারখানার ভেতরে গরম খুব বেশি।
“আমি আছি কোয়ালিটি কন্ট্রোলে। এই ফ্লোরে অন্তত ১৫০ জন কাজ করে। এখন এতগুলা লোকের জন্য যতই সিলিং ফ্যান বা এগজস্ট ফ্যান থাকুক, গরম কমে না। বাইরে থেকে গরম আসে একটা। তারপর মেশিনের গরম আছে, সুতার একটা গরম তো আছেই," ব্যাখ্যা করলেন ইমরান।
তার মতে, কারখানার ভেতরে গরম কমানোর জন্য যা যা করা সম্ভব, তার প্রায় সবই করে ফেলছে কোম্পানি। এরপর যদি আরও কিছু করার থাকে, তা হল এসি লাগানো।
“কিন্তু এত বড় ফ্লোরে এত মানুষের জন্য এসি, এটা সম্ভব কিনা জানি না আমি। আর এইখানে ধরেন যদি মানুষ একটু ফাঁকা ফাঁকা করে দাঁড়াতে পারে, তাহলে একটু গরম কম লাগত।"
শ্রমঘন কাজে গরমের মৌসুমে গরম লাগবে, সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে তাপপ্রবাহের মত ঘটনা বাড়ছে, আর তীব্র গরমে কাজ করতে গিয়ে বাংলাদেশের শ্রমিকরা তাদের কর্মক্ষমতা হারাচ্ছেন, তাতে মোট দেশজ উৎপাদন কমে গিয়ে অর্থনীতির জন্য বড় ক্ষতির ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে বলে উঠে এসেছে লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্সের এক গবেষণায়।
‘অ্যাডপটিং টু দা ইম্প্যাক্টস অব একস্ট্রিম হিট ইন বাংলাদেশ’স লেবার ফোর্স’ শিরোনামে জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে প্রকাশিত ওই গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, তীব্র গরমের কারণে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হলেন তৈরি পোশাক এবং কৃষি খাতের শ্রমিকরা।
বিশ্ব ব্যাংকের পরিসংখ্যানের বরাতে গবেষকরা বলছেন, ২০২১ সালে বাংলাদেশে মোট কর্মশক্তির ৩৭ শতাংশ যুক্ত ছিল কৃষিতে এবং ২২ শতাংশ শিল্পে। যাদের বাইরে কাজ করতে হয়, তারাই হিট স্ট্রেসের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।