প্রাণিবাহী রোগাতঙ্ক
বর্তমানে সারাদেশে এডিস মশার (এডি-ইজিপটি বা এডি-এলবোপিকটাস) উপদ্রবে ডেঙ্গু রোগাতঙ্কে সবাই ভুগছে। এডিস মশা এই রোগের জীবাণু বাহক, যার কোনো সরাসরি ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। সামাজিক ও ব্যক্তিগত সতর্কতা, পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা, মশক নিধন ও বংশবৃদ্ধি রোধ, সব সিম্পটোম্যাটিক ট্রিটমেন্ট, প্রয়োজনে রক্তের প্লাটিলেট শরীরে ইনজেক্ট করা, রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ইত্যাদিই এর চিকিৎসা, যা প্রতিদিন সরকারি-বেসরকারিভাবে বলা হচ্ছে।
এটি জুনোসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাণিদেহ (বাহক) থেকে মানবদেহে প্রবেশ করে। জুনোসিসের বহুবচন হলো জুনোসেস। এই শব্দের উৎপত্তি হচ্ছে জু বা প্রাণিগোত্র। মূলত এটি গ্রিক শব্দ। অর্থাৎ জুনোটিক ডিজিজ হলো– মানবদেহে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, পরজীবী বা শৈবাল জাতীয় জীবাণু কোনো পশু বা কীটপতঙ্গ (ভেকটোর) দ্বারা প্রবেশ করে রোগ তৈরি হওয়া। এই প্রক্রিয়ায় পৃথিবীতে মানবদেহে প্রায় ২৫০ কোটি প্রকার রোগ হয়েছে বা হতে পারে। তাই প্রতিবছর পৃথিবীতে প্রায় ২৭ লাখ মানুষ এই জাতীয় রোগে মারা যায়। বর্তমানে আরও প্রায় ১৭ লাখ অজানা জীবাণু আছে পৃথিবীতে।
বিশ্বব্যাংকের ২০১০ সালের এক দশকের হিসাব অনুযায়ী, প্রাণিবাহী রোগের কারণে সরাসরি পৃথিবীতে খরচ হয়েছে ২ কোটি ডলার এবং পরোক্ষভাবে ক্ষতি হয়েছে ২০ হাজার কোটি ডলার।
বাংলাদেশে সাধারণ জুনোটিক ডিজিজ হচ্ছে– এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা, রাবিশ, নিপাহ ভাইরাস ইনফেকশন, জাপানিজ এনকোলাইটিস, রোটাভাইরাস ইনফেকশন এবং ডেঙ্গু জ্বর। এমনকি কভিড-১৯ অতিমারিরও আলামত নাকি শনাক্ত হয়েছে চীনের কাঁচাবাজারে, যা বেশির ভাগ সময় পানিতে সিক্ত থাকে। তাই জাতিসংঘ ২০২০ সালে জুনোটিক ডিজিজ দ্বারা অতিমারির ওপর বিশেষ মনোযোগ দিয়েছে।