ব্যাংক লুটছেন মালিকেরাই
নিজেরা ব্যাংক মালিক ও উদ্যোক্তা। একই সঙ্গে ব্যাংকঋণের বড় গ্রাহকও তাঁরা। সমঝোতার ভিত্তিতে ঋণ নিচ্ছেন একে অন্যের ব্যাংক থেকে। ছাড়ছেন না নিজ ব্যাংককেও। এভাবে নামে–বেনামে গ্রাহকের আমানত পকেটে পুরতে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমেছেন ব্যাংকের পরিচালকেরা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে প্রাপ্ত এক প্রতিবেদন বলছে, পদ-পদবির প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংকিং খাত থেকে গত সাত বছরে ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা নিয়েছেন পরিচালকেরা। সবগুলো ব্যাংক থেকে গত মার্চ পর্যন্ত শুধু পরিচালকেরাই নিয়েছেন ২ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা, যা ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের ১১ শতাংশ।
পরিচালকদের দেওয়া ঋণের শীর্ষে থাকা ১৬ ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে পূবালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, সাউথইস্ট ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও ইস্টার্ণ ব্যাংক। এর বাইরেও প্রথম প্রজন্মের সোনালী ব্যাংক থেকে শুরু করে হালের সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকসহ কমবেশি প্রায় সব ব্যাংকের পরিচালকেরাই ঋণ নেওয়ার তালিকায় রয়েছেন।
ব্যাংক পরিচালকদের নেওয়া ঋণের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১৬ সালে ব্যাংক পরিচালকদের ঋণের পরিমাণ ছিল ৯০ হাজার কোটি টাকা। অথচ পরবর্তী সাত বছরেই তা বেড়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ব্যাংকের পরিচালকদের ঋণ বিতরণ ও তার ব্যবহারে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। এই পরিচালকেরা ব্যবসায়ী, তাঁরাই আবার ব্যাংকের উদ্যোক্তা।
তাঁরা ঋণ নেন ও খেলাপি হন এবং আবার ঋণ নেন। এসব বেশ কিছুদিন ধরে চলছে। এটা ব্যাংক ও অর্থনীতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালকদের ঋণ ও খেলাপির বিষয়ে নজর দিচ্ছে না।
নিজেদের ব্যাংক থেকে পরিচালকদের ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আছে আইনে। এ জন্য পরিচালকেরা অন্য ব্যাংককে টার্গেট করে কাঙ্ক্ষিত ঋণ বাগিয়ে নিয়েছেন। নিজ ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা হলেও, বাকি টাকা অন্য ব্যাংক থেকে নিয়েছেন তাঁরা। পরিচালকেরা ব্যাংকের টাকা যে হারে নিয়েছেন, সে তুলনায় পরিশোধের চিত্র খুবই হতাশাজনক। তবে তাঁরা সামান্য টাকা ফেরত দিয়ে খেলাপি না দেখানোর জন্য কৌশলে ঋণ পুনঃ তফসিল করে রাখেন। তারপরও পরিচালকদের প্রায় ৭৫৭ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে।