পরিকল্পনার প্রায় দ্বিগুণ বিনিয়োগ, পূরণ হয়নি বেশির ভাগ উদ্দেশ্য
দেশের সড়ক যোগাযোগ খাতের জন্য ২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে সরকার। ২০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, নতুন সেতু নির্মাণ, সড়ক-সেতু পুনর্বাসন, সংস্কার এবং রক্ষণাবেক্ষণের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে ৬৬ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা বিনিয়োগের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে ২০২৭-২৮ অর্থবছর মেয়াদি এ মহাপরিকল্পনাটি বর্তমানে শেষভাগে চলে এসেছে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, এখন পর্যন্ত বিনিয়োগ হয়েছে প্রাক্কলনের প্রায় দ্বিগুণ। এর মধ্যে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) মাধ্যমে গত ১১ বছরে খরচ হয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। যদিও যে সাতটি প্রধান উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য মহাপরিকল্পনা নিয়েছিল সরকার, তার বেশির ভাগই পূরণ হয়নি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, সড়ক মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য এখন পর্যন্ত যে বিনিয়োগ হয়েছে, তা থেকে যতটা সুফল পাওয়ার কথা বাস্তবে তা হয়নি। এজন্য দায়ী যথাযথভাবে এবং সঠিক সময়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে না পারা, অবকাঠামো বিজ্ঞানসম্মতভাবে তৈরি করতে না পারা, প্রকল্পকেন্দ্রিক উন্নয়নকে প্রাধান্য দেয়া, অনিয়ম-দুর্নীতি ও নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রীর ব্যবহারসহ বিভিন্ন ধরনের বিষয়।
সড়ক মহাপরিকল্পনার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল দেশের অর্থনৈতিক ও ট্রাফিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা। ১৫ বছর হতে চললেও পূরণ হয়নি সেটি। সরকারের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য বলছে, দেশের অর্থনীতির ‘লাইফ লাইন’ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলছে ধারণক্ষমতার বেশি যানবাহন। অন্য সড়কগুলোরও একই অবস্থা। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের জরিপে ভালো সড়কের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান তলানিতে (১৩৪টি দেশের মধ্যে ১১৩তম)। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবে বিশ্বের চতুর্থ ধীরগতির সড়ক নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের, যেখানে যানবাহনের গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ৪১ কিলোমিটার।