আশা-হফনুং: ‘সন্তান হারানোর’ বেদনা থেকে পাহাড়ের এক স্কুল
গল্পটা এমন- বান্দরবানের গহীন পাহাড়ের এক ম্রো মা তার ছেলেকে লেখাপড়া শেখাতে পাঠিয়েছিলেন দূরের এক মফস্বল শহরে। কিন্তু কয়েকবছর পরে সেই ছেলে আর মায়ের কাছে ফিরে তো আসেনি; বরং পরিচয় পাল্টে তাকে ‘ম্রো’ থেকে ‘বড়ুয়া’ করা হয়েছে।
থানা-পুলিশ করেও ছেলেকে ফেরত পাননি সংথক ম্রো। তার আফসোস, যদি বাড়ির কাছে একটা স্কুল থাকত, তাহলে হয়তো নিজের ছেলেকে তিনি কোলছাড়া করতেন না; আর ছেলেও মাকে, মায়ের গোষ্ঠী-পাড়া-ভাষাকে ভুলতে পারত না।
সংথক ম্রোয়ের এই ‘ছেলে হারানোর’ বেদনা তার পাড়াবাসী, সম্প্রদায় আর কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবীকে গভীরভাবে স্পর্শ করে। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেন, সংথক ম্রোয়ের মতো আর কারও সন্তান যেন পড়াশোনা করতে গিয়ে ‘হারিয়ে’ না যায়- সেজন্য একটা স্কুল গড়ে তুলবেন।
সেই ভাবনা থেকেই নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দোছড়ি ইউনিয়নের দুর্গম এলাকায় ম্রো শিশুদের জন্য স্থাপিত হয়েছে একটি স্কুল। একজন জার্মান প্রবাসী ও ২০ জন স্বেচ্ছাসেবী মিলে তিন পাহাড়ের মাঝখানে তৈরি স্কুলটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘রেংয়পাড়া আশা-হফনুং বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’। জার্মান শব্দ ‘হফনুং’ এর বাংলা অর্থ ‘আশা’।
সম্প্রতি পাড়াবাসী বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে স্কুলটির উদ্বোধন করেছেন। নানা রঙের কাগজ দিয়ে স্কুল ও অঙ্গনকে সাজানো হয়। স্কুলের প্রবেশ পথে তৈরি করা হয় কাগজের গেইট। জুমচাষি সংথক ম্রো সকালে ঘণ্টা বাজিয়ে সেই স্কুলের উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে সংথক ম্রো তার মাতৃভাষাতেই বলেন, “শুধু লেখাপড়া করানোর জন্য পাঁচ বছর বয়সি সন্তানকে কক্সবাজারে উখিয়ায় পাঠিয়ে ছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজের সন্তানকে হারিয়েছি। আর যাতে কেউ আমার মত নিজের সন্তানকে এভাবে না হারায় তার জন্য আমাদের এই পাড়ায় স্কুল করা হয়েছে। আমাদের আরও শিশুদের কথা ভেবে যারা স্কুল করে দিয়েছে তাদের প্রতি সবসময় কৃতজ্ঞতা থাকবে।”