সস্তায় বিদেশি ঋণ এখন গলার কাঁটা
করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর বিনিয়োগে স্থবিরতার কারণে বিশ্ববাজারে ঋণের সুদহার শূন্যের কাছাকাছি নামে। হুন্ডি বন্ধ থাকায় ২০২০-২১ অর্থবছরে রেকর্ড ২৫ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল। রপ্তানি বাড়ে ১৫ শতাংশের ওপরে। বেশির ভাগ দেশে তহবিল পড়ে ছিল। অথচ বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে ওই সময়েই স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ বাড়ে গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সস্তায় নেওয়া এসব বিদেশি ঋণ এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমদানি ব্যাপক কমানো এবং রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধির পরও স্বস্তি ফিরছে না ডলার বাজারে। কারণ, বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণ পরিশোধের বড় ধরনের চাপ রয়েছে।
ব্যাংক ও উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডলার সংকটের পাশাপাশি ঋণ পরিশোধের জন্য খরচও অনেক বেড়েছে। গত বছরের শুরুতে প্রতি ডলার পাওয়া যেত ৮৬ টাকায়। এখন ১ ডলার কিনতে খরচ হচ্ছে অন্তত ১০৯ টাকা। এর মানে, শুধু বিনিময় হারজনিত কারণে প্রতি ডলারে বাড়তি গুনতে হচ্ছে ২৩ টাকা। সুদহারও কয়েক গুণ বেড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে গত বছরের শুরুতে সব ধরনের খরচসহ স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণের সুদহার ছিল ৩ শতাংশের কম। এখন সেই ঋণে সুদ গুনতে হচ্ছে ৯ শতাংশের বেশি। আবার বিনিময় হার বা সুদহার এ পর্যায়ে স্থিতিশীল থাকবে কিনা তা কেউ বলতে পারছে না। অভ্যন্তরীণ ঋণের তুলনায় বিদেশি ঋণের খরচ বেশি হওয়ায় একশ্রেণির ব্যবসায়ী বিদেশি ঋণ নিতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা মুডিস সম্প্রতি বাংলাদেশের কান্ট্রি রেটিং কমিয়ে দিয়েছে। ফলে বেশি সুদে বিদেশি ঋণ পাওয়াও এখন কঠিন হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক অনেক ব্যাংক বাংলাদেশি কোনো কোনো ব্যাংকের ক্রেডিট লাইন বা ঋণসীমা কমিয়েছে। এতে করে একদিকে নতুন ঋণ কম আসছে, অন্যদিকে আগের পরিশোধ বেড়ে গেছে। ডলারের বাজারে যা এখন প্রধান উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।