ধন্যপুর রক্তে ভিজল, তবু কি হুঁশ ফিরল?
‘বাবারে, তুই বুঝি আমার জন্য আর ওষুধ কিনে আনবি না? মাকে ছাড়া তুই কীভাবে থাকবি? কই গেলি? আমার পোলাডারে জালিমরা এমনে কোপাইয়া মারল।’ গত ১৮ জুলাই মঙ্গলবার বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ছুরিকাঘাতে খুন হওয়া সজীব হোসেনের মায়ের আর্তনাদ এটি। সজীব হোসেনের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানার ধন্যপুর গ্রামে। সজীব চন্দ্রগঞ্জ উপজেলা কৃষক দলের সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
ধন্যপুর রক্তে ভিজল
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক হারুন অর রশীদ। এক হাজার মানুষের লাশের ময়নাতদন্ত করেছেন তিনি; সংবাদপত্রে প্রকাশিত এমন তথ্য জেনেছিলাম কিছুদিন আগে। চিকিৎসা-সংক্রান্ত বইয়ের পাশাপাশি তাঁর কাছে থাকে কবি জীবনানন্দ দাশের বই। তাঁর প্রিয় কবিতা জীবনানন্দের ‘আট বছর আগের একদিন’। কখনও কখনও আবৃত্তির ঢঙে জীবনানন্দ থেকে উচ্চারণ করেন : “লাশকাটা ঘরে/চিৎ হয়ে শুয়ে আছে টেবিলের ’পরে।” দীর্ঘদিন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে মরদেহ কাটাছেঁড়া করতে গিয়ে বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছে হারুন অর রশীদের। আগুনে পুড়ে যাওয়া লাশ, ট্রেনে কাটাপড়া লাশ, বাসের চাকায় থেঁতলে যাওয়া লাশ, গুলি খাওয়া লাশ, ফাঁসি দেওয়া লাশ, ছুরিকাঘাত খাওয়া লাশ– হরেক রকম লাশ তাঁকে মর্গের টেবিলে রেখে আবারও কাটাছেঁড়া করতে হয়। ছুরিকাঘাতে মৃত্যু হওয়া লাশে নতুন করে ছুরি চালানোর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে চোখ ভিজে এসেছিল হারুন অর রশীদের। ২০০৪ সালে জন্ম নেওয়া ১৯ বছরের টগবগে তরুণ সজীব হোসেনের বুকে, পিঠে, হাতে ছুরির আঘাত পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। গ্রামের বাড়ি ধন্যপুরে তাঁকে দাফন করা হয়েছে। সজীবের ময়নাতদন্ত যে চিকিৎসক করেছেন তিনিও কি হারুন অর রশীদের মতো ‘আট বছর আগের একদিন’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন ক্ষণে ক্ষণে?