নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়নে সমস্যা কোথায়?
কোনো দেশের সক্ষমতা উন্নয়নের জন্য দেশটির স্বাধীনতা থাকতে হয়। পরাধীনতায় জাতীয় সক্ষমতার বিকাশ ঘটে না। ১৯৭১ সালে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি এবং আমাদের জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি বা উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি হয়। সরকারের কাছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উন্নয়ন বিশেষভাবে প্রাধান্য পায়। বিদ্যুৎ খাত উন্নয়নে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বিপিডিবি প্রতিষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি জ্বালানি খাত উন্নয়নে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা পেট্রোবাংলা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সচিবের পদমর্যাদায় একজন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞকে এ সংস্থার চেয়ারম্যান করা হয়। অর্থাৎ এনার্জি খাতে প্রফেশনালদের ক্ষমতায়নের সুযোগ সৃষ্টি হয়। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে প্রফেশনালদের সক্ষমতা উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নই মূলত এ খাতের উন্নয়ন। অথচ এখানেই বিপত্তি।
দুই.
১৯৭৩ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়। তখন প্রতিটি দেশই নিজস্ব জ্বালানি উৎসের অনুসন্ধানে নামে। আমরাও নিজস্ব উৎস থেকে বিদেশী বিনিয়োগে প্রডাকশন শেয়ারিং কনট্রাক্টের (পিএসসি) আওতায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উদ্যোগ নিই। কিন্তু দেখা গেল, যে পরিমাণ তেল-গ্যাস উত্তোলন হবে তার বেশির ভাগই বিদেশী কোম্পানি পাবে। তাই তখন ভাবা হলো নিজস্ব সক্ষমতায় উত্তোলন করা হলে শতভাগ তেল-গ্যাস আমরাই পাব। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এ ভাবনা কাজে আসেনি। আমলাকরণের শিকার হওয়ায় জাতীয় সক্ষমতা উন্নয়ন আর আলোর মুখ দেখেনি।
তিন.
পরবর্তী সময়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত প্রশাসন আমলাকরণের শিকার হলো। প্রতিটি সংস্থা/কোম্পানি প্রশাসন কোনো না কোনোভাবে আমলার নিয়ন্ত্রণে আসে। এভাবে কোনো কারিগরি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা উন্নয়ন অসম্ভব। ফলে অনিয়ম-দুর্নীতি এবং লুণ্ঠনমূলক ব্যয় বৃদ্ধি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। জনগণের বিরোধিতার কারণে কয়লা ও গ্যাস রফতানি রহিত হলেও জাতীয় সক্ষমতা উন্নয়ন উপেক্ষিত হওয়ায় নিজস্ব সক্ষমতায় তা উত্তোলন করার পরিবর্তে বিদ্যুৎ, কয়লা, গ্যাস আমদানির ওপর দেশ এখন অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। এ অবস্থায় একদিকে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, অন্যদিকে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও সংকট এবং ভর্তুকি প্রত্যাহার—এসব কারণে ভোক্তা পর্যায়ে অব্যাহত অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধিতে ভোক্তারা একদিকে জ্বালানি সুবিচার (এনার্জি জাস্টিস) বঞ্চিত, অন্যদিকে জ্বালানি নিরাপত্তাহীনতার শিকার।
চার.
আমাদের দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। সৌরবিদ্যুৎ এখন বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক। নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি ২০০৮ মতে, ২০২১ সালে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ১০ শতাংশ হতে হতো নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ। কিন্তু বাস্তবে তা ১ শতাংশও নয়। প্রতি ইউনিট সৌরবিদ্যুৎ অনধিক ৭ টাকা ৫০ পয়সায় ওপেক্স মডেলে উৎপাদন করা সম্ভব। তা যদি হতো, তাতে পর্যাপ্ত বৈদেশিক ঋণ ও মুদ্রা সাশ্রয় করা যেত। ব্যবহৃত গ্যাসে স্বল্প মূল্যের নিজস্ব গ্যাস ৮০ শতাংশ সত্ত্বেও গ্রিড বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় হার গড়ে প্রায় ১২ টাকা। আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি ও ডলার সংকটের কারণে কয়লা, এলএনজি ও ফার্নেস অয়েল আমদানি ব্যাহত হচ্ছে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা অনেকাংশে অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ক্যাপাসিটি চার্জের কারণে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি এখন নিয়ন্ত্রণহীন।