অর্থনীতিতে ভুল নীতির খেসারতের অর্থবছর
কাঁচা মরিচের মতো একটি পণ্য ভোক্তার পকেট কতটা কাটতে পারে, সেটা দেশের মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একেবারে শুরুতেই। অন্তত ৭০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে এই পণ্য। আরও বেশি দামের কথাও শোনা গেছে। আমদানির খবরে মাঝখানে খানিকটা কমলেও কাঁচা মরিচের দাম আবার বাড়তি। তবে নতুন অর্থবছরে শুধু কাঁচা মরিচ একা সাধারণ ভোক্তাদের কপালে ভাঁজ ফেলছে এমন নয়; বাজারে দাম বাড়তি প্রায় সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের।
নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি হঠাৎ করে নতুন অর্থবছরে ঘটেনি। সত্যিকার অর্থে সদ্য বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে কম আর সীমিত আয়ের মানুষ নাকানিচুবানি খেয়েছেন প্রায় সব ধরনের পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে। বছরজুড়ে ছিল মূল্যস্ফীতির দাপট। গত এক দশকে মূল্যস্ফীতির এত চাপ মানুষকে সহ্য করতে হয়নি। মূল্যস্ফীতি আগের অর্থবছর, অর্থাৎ ২০২১-২২ সালেও বাড়তি ছিল। কিন্তু সরকারের প্রত্যাশা ছিল বিদায়ী অর্থবছরে এই হার হবে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জানাচ্ছে, বছরে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ০২ শতাংশ—বছরওয়ারি হিসাবে যা গত এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ।
গত অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির এই চোখরাঙানি অবশ্য কেবল বাংলাদেশ দেখেছে এমন নয়। কোভিড মহামারি থেকে উত্তরণ হতে না হতেই ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় সারা বিশ্বেই পণ্যমূল্য লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। মূল্যস্ফীতি থেকে বাঁচতে প্রায় সব দেশই লড়াইয়ের হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেয় নীতি সুদহার বৃদ্ধিকে। এ সময় পৃথিবীর হাতে গোনা যে কয়টা দেশ সুদের হার বাড়ানোর পথে হাঁটেনি, বাংলাদেশ তার একটি। সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ টানা ১০ বার সুদের হার বাড়িয়ে ১৬ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যায়। ফলে ডলার মহার্ঘ্য বস্তু হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশ ডলারের দাম ধরে রাখার ভুল নীতি বেছে নেয়। সেই সঙ্গে কমতে থাকে প্রবাসী আয় এবং রপ্তানি। ফলে পুরো অর্থবছরে আর্থিক আর ব্যবসা-বাণিজ্যের অঙ্গনে যে শব্দগুচ্ছ সবচেয়ে বেশি শোনা গেছে, তা হলো ‘ডলার–সংকট’।
- ট্যাগ:
- ব্যবসা ও অর্থনীতি
- মূল্যস্ফীতি
- ভুল নীতি