অপরিকল্পিত নগরায়ণ, তদারকি সংস্থাসমূহের ব্যর্থতায় জলাধার ও সবুজে পূর্ণ একটি নগরের কী বিবর্ণ পরিণতি ঘটিতে পারে, বর্তমান ঢাকা উহার জাজ্বল্যমান উদাহরণ। শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপার সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত তথ্যও উহাই সমর্থন করিতেছে।
উক্ত তথ্য উদ্ধৃত করিয়া রবিবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদন অনুসারে, অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণের কারণে গত ২৮ বৎসরে ঢাকায় সবুজ ও উন্মুক্ত স্থান ৫২ বর্গকিলোমিটার হইতে ২৯ বর্গকিলোমিটারে নামিয়া আসিয়াছে। উপরন্তু এই মহানগরে ২০ শতাংশ সবুজ এলাকার প্রয়োজন থাকিলেও বিদ্যমান মাত্র ৮ শতাংশ। ফলে, ঢাকার উষ্ণতম স্থান এবং শহরের বাহিরের প্রাকৃতিক পরিবেশসমৃদ্ধ এলাকার মধ্যে দিবস ও রাত্রে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রার পার্থক্য দাঁড়াইয়াছে যথাক্রমে ৭ ও ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যাহা যে কোনো মানদণ্ডে ভয়ংকর। শুধু উহাই নহে; বর্তমানে গ্রামাঞ্চল অপেক্ষা ঢাকায় তাপমাত্রা বেশি থাকে গড়ে সাড়ে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এহেন পরিস্থিতির করুণ শিকার হইতেছেন বিশেষত বৃদ্ধ ও শিশুরা। তাহাদের অনেকেই হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত; এমনকি প্রাণহানির শিকারও হইতে দেখা গিয়াছে।
হতাশাজনক, এই রূপ পরিস্থিতিতে গরমের তীব্রতা সামাল দিতে অনেক নাগরিক ক্রমবর্ধমান কৃত্রিম ব্যবস্থা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের দ্বারস্থ হইতেছেন, যাহা পুনরায় পরিবেশের উষ্ণতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখিতেছে। অন্যদিকে সিটি করপোরেশন সড়ক বিভাজক পুনর্নির্মাণের নামে ১৫ বৎসর বয়সী বৃক্ষ কর্তন করিয়া তথায় বাগানবিলাসের চারা রোপণ করিতেছে। বলা বাহুল্য, করপোরেশনের এহেন প্রশ্নবিদ্ধ তৎপরতার বদৌলতে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীর কিঞ্চিৎ অর্থযোগের ব্যবস্থা হইলেও উহাতে পরিবেশের ক্ষতি বরং বৃদ্ধি পায়।
- ট্যাগ:
- মতামত
- অপরিকল্পিত নগরায়ন