বছরজুড়ে চুপচাপ মশা বাড়লে দৌড়ঝাঁপ
জলবায়ুগত কারণে ঢাকাকে মশামুক্ত করা সম্ভব নয়। তবে পদ্ধতিগতভাবে বছরব্যাপী জরিপ, গবেষণা ও যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করলে মশা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে। এসব কাজ করে একই জলবায়ুর অবস্থানে থেকে মশা নিয়ন্ত্রণে সফলতা পেয়েছে কলকাতা। সবকিছু জানা-বোঝার পরও পদ্ধতিগত কার্যক্রম পরিচালনা না করায় মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ ঢাকা। সে ব্যর্থতায় ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক এডিস মশার বিস্তার এখন দেশজুড়ে। বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে কার্যক্রম পরিচালনা না করায় এ ক্ষেত্রে সফলতা মিলছে না। এমন অভিমত এসেছে কীটতত্ত্ববিদদের কাছ থেকে।
তাদের মতে, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে এডিস মশার বিস্তার ঘটে। এ সময় প্রতিদিন মশার কামড়ে শত শত মানুষ অসুস্থ হয়। অকালে ঝরে যায় অনেকের প্রাণ। বছরের শুরুতে এডিস প্রজননের পূর্বাভাস দিলেও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয় না দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু বাড়লে তখন কার্যক্রম জোরদার করে; শুরু হয় দৌড়ঝাঁপ। যদিও এতে কোনো সুফল মিলে না। প্রতি বছর মশা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম দেখে এটাকে অনেকটা লোকদেখানো বলে মনে হয়। কেননা, ওই সময়ের কার্যক্রমে মশা মারার চেয়ে প্রচারণা বেশি করা হয়। মেয়র, কাউন্সিলর ও কর্মকর্তারা এসব করে নিজেদের দায় এড়ানোর চেষ্টা করেন।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে বছরজুড়ে মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হয়। ঢাকার মশা নিয়ন্ত্রণ কাজে তার উল্টো চিত্র। এ কাজের জন্য যোগ্য পেশাজীবীরা হলেন কীটতত্ত্ববিদ। অথচ এ কাজের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কীটতত্ত্ববিদরা। ডেঙ্গু ভাইরাসের ভয়াবহ এই বিস্তারের সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) কীটতত্ত্ববিদ শূন্য। সাতজন এমবিবিএস পাস করা চিকিৎসক এ কাজের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সঙ্গে রয়েছেন ১ হাজার ৫০ জন মশককর্মী ও তত্ত্বাবধায়ক। নেই নিজস্ব গবেষণাগার। মশক নিধনকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণে যে অভিজ্ঞতা রয়েছে, তার আলোকে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তারা। কোন বছর কোন কোন এলাকায় কী ধরনের মশার প্রজনন ঘটছে; তা চিহ্নিত করতে পারছেন না তারা। একই চিত্র, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনেরও (ডিএনসিসি)। এ সংস্থায় মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন একজন কীটতত্ত্ববিদ ও ১৩ জন এমবিবিএস চিকিৎসক। এই টিমকে সহায়তা দিচ্ছেন প্রায় ৮০০ জন মশককর্মী। তাদেরও নেই নিজস্ব গবেষণাগার।