পৌনে ২০০ বছরেও শেষ হলো না সাঁওতালদের হুল!
সাঁওতাল বিদ্রোহ বা হুল বললেই প্রথমে আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে সিধু-কানুর কল্পিত মুখের অবয়ব, যে অবয়বে ফুটে আছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর দৃঢ় প্রত্যয়।
প্রায় পৌনে ২০০ বছর আগে অবিভক্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম, বাঁকুড়া ও মেদিনীপুরের সাঁওতালদের ছিল না কোনো শিক্ষাদীক্ষার আলো বা মৌলিক অধিকারের সুযোগ। কিন্তু ইংরেজ শাসক আর তাদের দোসর সুদখোর অত্যাচারী জমিদার, মহাজন ও ইংরেজ কর্মচারীদের অন্যায়, অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সাঁওতালেরাই প্রথম রুখে দাঁড়িয়েছিল।
ইংরেজ শাসক–শোষকদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রথম স্ফুলিঙ্গটি বিস্ফোরিত হয় ১৮৫৫ সালের ৩০ জুন। ওই দিন ১০ হাজারের বেশি সাঁওতাল নিয়ে সিধু-কানুর নেতৃত্বে এক প্রতিবাদ সমাবেশ ও কলকাতা অভিমুখে গণপদযাত্রা করা হয়েছিল। বলা হয়ে থাকে, সিধু-কানুর নেতৃত্বে এ গণপদযাত্রাই উপমহাদেশের প্রথম পদযাত্রা, যা পরবর্তী সময় শান্তিপূর্ণভাবে যেকোনো দাবি আদায়ের একটি অন্যতম পন্থা হয়ে উঠেছে, যেটি বর্তমানে ‘লংমার্চ’ নামে সর্বাধিক পরিচিত।
শত বছর আগে যে স্বপ্ন আর আশা নিয়ে সাঁওতালেরা বিদ্রোহ করেছিলেন, সেই স্বপ্ন আজও তাঁদের কাছে অধরাই রয়ে গেছে। ১৮৫৫ সালে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ব্রিটিশ শাসক ও জোতদার শ্রেণির অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন সাঁওতালেরা। অথচ একবিংশ শতাব্দীতে এসেও সাঁওতালদের (গোবিন্দগঞ্জের) নিজেদের অস্তিত্ব ও অধিকারের জন্য এখনো লড়াই করে যেতে হচ্ছে, প্রাণ দিতে হচ্ছে!
এ দেশে সাঁওতাল, মুন্ডা, কোচ থেকে শুরু করে পাহাড়ের চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, খিয়াং, ওঁরাওদের প্রতিদিন প্রতিনিয়ত নিপীড়ন, নির্যাতন আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে যেতে হচ্ছে।
সময়ের পরিক্রমায় অবিভক্ত ভারতবর্ষ খণ্ড–বিখণ্ড হয়েছে। ক্ষমতার মসনদে নেতৃত্বের পালাবদল ঘটেছে। এ উপমহাদেশ থেকে ব্রিটিশরা বহুকাল আগেই চলে গেছে, কিন্তু আজও শাসকগোষ্ঠীর মগজে–মননে শোষণের সেই বিষয় বিচরণ করছে! তাই কেবল সাঁওতালেরা নন, পাহাড়-সমতলের সব ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীই আজ বৈষম্য আর বঞ্চনা-নির্যাতনের শিকার।