জেরিনের প্রেম যেন সিনেমার গল্প
সপ্তম শ্রেণিতে লেখাপড়ার সময় তাসনিন জেরিন স্নেহা প্রেমে পড়েন তুষার সরকারের। মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটের তখনকার এই ছাত্রী পালিয়ে যান তুষারের সঙ্গে। অপরিণত বয়সেই (১৩ বছরের বেশি) বিয়ে করেন তুষারকে। ঢাকার মিরপুর থেকে পালিয়ে যান চাঁদপুরে। মিরপুরের ১০ নম্বর সেকশন ও সি-ব্লকের বিশাল বিত্তশালী বাবার একমাত্র মেয়ে জেরিন। অন্যদিকে তুষার একই সেকশনে ইন্টারনেটের সংযোগ প্রদানকারী একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। কোনোভাবেই মেয়ের বাবা এ ঘটনা মেনে নিতে পারেননি। ২০১৮ সালের ২ ডিসেম্বর তুষার ও তার পরিবারের আরও ৫ সদস্যের বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় অপহরণ মামলা করেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জোরে মেয়েকে বাসায় ফিরিয়ে আনেন। পলাতক খাকেন তুষার। চলতে থাকে অপহরণ মামলার বিচার।
বিচার চলাকালে মেয়েটি তার জবানবন্দিতে আদালতকে বলেন, ‘তুষারের সঙ্গে আমার ৯ মাস ধরে প্রেমের সম্পর্ক। স্কুল ফাঁকি দিয়ে প্রায়ই তুষারের সঙ্গে ধানমন্ডি লেকসহ বিভিন্ন জায়গায় দেখা করতাম। ২০১৮ সালের ১৪ আগস্ট গোপনে তুষারের সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হই।’ কিন্তু মেয়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক (১৮ বছরের নিচে) হওয়ায় আদালতে তার বিয়ে বৈধ হয়নি। ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ বিচার শেষে তুষারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন গত বছরের ১২ জুন। এরই মধ্যে সময় পার হয়েছে। জেরিন এখন প্রাপ্তবয়স্ক। এবার গত ১৯ ফেব্রুয়ারি কলেজ থেকে ফের সাজাপ্রাপ্ত তুষারের সঙ্গে পালিয়ে যান জেরিন। প্রাপ্তবয়স্ক জেরিন নতুন করে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন। কক্সবাজারে শুরু করেন সংসার। মধুচন্দ্রিমা পার করে অন্তঃসত্ত্বাও হয়েছেন জেরিন। এরই মধ্যে হঠাৎ আবার বিষাদের ছায়া। গত ৫ জুন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অপহরণ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত তুষারকে গ্রেপ্তার করে। পাঠানো হয়েছে জেলহাজতে। অপরিণত বয়সের প্রেম সফল করতে এবার পরিণত বয়সে জেরিন শুরু করেছেন আইনি লড়াই।
জেরিন কালবেলাকে বলেন, ‘ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ার কারণে বয়সের একটা গ্যাপ আছে। প্রথম যখন বিয়ে হয় তখনই বয়স ১৯ ছিল। কিন্তু বাবা মিথ্যা মামলা করার জন্য ১৩ বছর বয়স দেখিয়েছেন। এখন আমার বয়স ২৩ বছর। তিনি আরও বলেন, স্বামী মধ্যবিত্ত পরিবারের হওয়ায় আমার বিশাল বিত্তশালী বাবা মেনে নিতে পারেননি। আমাদের মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে অর্থ-সম্পদই বড় বাধা। বাবা চার বছর ধরে আমাকে অনেক নির্যাতন করেছেন। আর সহ্য করতে পারছি না। বাবার কাছে ফেরত যেতে চাই না। স্বামীর সঙ্গে সুখে-শান্তিতে সংসার করতে চাই।’