ভূমিকম্প হচ্ছে এমন এক বিভীষিকার নাম, যা কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে ব্যাপক জনপথ ধ্বংস করে দিতে পারে। ভূমিকম্প সাধারণত কয়েক সেকেন্ড থেকে এক অথবা দুই মিনিট স্থায়ী হয়। একবার ভূমিকম্প হওয়ার পর একই স্থানে অথবা কাছাকাছি অঞ্চলে বেশ কয়েকবার ভূমিকম্প হতে পারে। একে ‘আফটার শক’ বলে। ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে ‘ইপিসেন্টার’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইপিসেন্টার হলো যেখানে ভূমিকম্প উৎপন্ন হয়। সারা বিশ্বে প্রতি মুহূর্তে কোথাও না কোথাও ভূমিকম্প অনুভূত হচ্ছে। আমরা যদি ইউনাইটেড স্ট্রেট জিওলজিক্যাল সার্ভের ওয়েবসাইট দেখি, সেখানে প্রতিনিয়ত পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে যাওয়া নানা মাত্রার ভূমিকম্পের তথ্য পাওয়া যায়।
অনেক আগে পৃথিবীর সব স্থলভাগ একত্রে ছিল। পৃথিবীর উপরিভাগ কতগুলো অনমনীয় প্লেটের সমন্বয়ে গঠিত বলে ধীরে ধীরে তারা আলাদা হয়ে গেছে। এ প্লেটগুলোকেই বিজ্ঞানীরা বলে টেকটোনিক প্লেট। আর দুটি টেকটোনিক প্লেটের মাঝে থাকা ফাটলকে ফল্ট লাইন বলা হয়। ভূমিকম্পের জন্য ফল্ট লাইনের বড় ভূমিকা রয়েছে। ফল্ট লাইন দিয়ে ২ প্লেটের সংঘর্ষ হলে ভূমিকম্প হয়। মূলত টেকটোনিক প্লেটগুলো একে অপরের সঙ্গে পাশাপাশি লেগে থাকে। কোনো কারণে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ হলেই তৈরি হয় শক্তি, এ শক্তি সিসমিক তরঙ্গ হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। যদি তরঙ্গ শক্তিশালী হয়, তাহলে সেটি পৃথিবীর উপরিতলে এসে ভূমিকে কাঁপিয়ে তোলে। এ কাঁপুনিই মূলত ভূমিকম্প। সারা বিশ্বকে সাতটি মেজর প্লেটে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো-আফ্রিকা প্লেট, ইউরেশিয়া প্লেট, অ্যান্টারটিক প্লেট, ইন্দো-অস্ট্রেলীয় প্লেট, নর্থ আমেরিকান প্লেট, প্যাসিফিক প্লেট ও সাউথ আমেরিকান প্লেট। বাংলাদেশের ভূমিকম্প বলতে বাংলাদেশ ও তৎসংলগ্ন এলাকার ভূমিকম্পকে বোঝায়। বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি ভূতাত্ত্বিক চ্যুতি এলাকা বা ফল্ট জোন সচল অবস্থায় রয়েছে। এগুলো হচ্ছে বগুড়াচ্যুতি এলাকা, রাজশাহীর তানোরচ্যুতি, ত্রিপুরাচ্যুতি, সীতাকুণ্ড টেকনাফচ্যুতি, হালুয়াঘাটচ্যুতির ডাওকীচ্যুতি, ডুবরিচ্যুতি, চট্টগ্রামচ্যুতি, সিলেটের শাহজীবাজারচ্যুতি (আংশিক-ডাওকীচ্যুতি) এবং রাঙামাটির বরকলে রাঙামাটিচ্যুতি এলাকা। বাংলাদেশ ভারতীয়, ইউরেশীয় এবং বার্মার (মিয়ানমার) টেকটোনিক প্লেটের মধ্যে অবস্থান করছে। ভারতীয় এবং ইউরেশীয় প্লেট দুটি (১৯৩৪ সালের পর থেকে) দীর্ঘদিন ধরে হিমালয়ের পাদদেশে আটকা পড়ে আছে, অপেক্ষা করছে বড় ধরনের নড়াচড়া অর্থাৎ ভূকম্পনের।