বিআরটি প্রকল্পের বিলম্ব যেভাবে বছরে ১২৩ মিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতি করছে
এশিয়ার দেশগুলোতে একটি বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) করিডর যানবাহনের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে সময় লাগে তিন বছর। বাংলাদেশের প্রথম বিআরটি প্রকল্পটি ২০১২ সালে শুরু হয়ে পরের চার বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল।
এরপর পেরিয়ে গেছে এগারো বছর। জয়দেবপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০.৫ কিলোমিটার বিআরটির কাজ এখনও শেষ হয়নি। এই সময়ে প্রকল্পটির ব্যয় ২,০৪০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৪,২৬৮ কোটি টাকায় ঠেকেছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, দ্রুতগামী বাস করিডর প্রকল্প বিলম্বিত হওয়ার কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ কত?
প্রকল্পটিতে অর্থায়নকারী সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলছে, এই অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ রীতিমতো বিস্ময়কর।
সংস্থাটি বলছে, ২০১৬ সালের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা গেলে দেশের প্রথম বিআরটি সড়কে সময় ও অর্থ সাশ্রয় এবং যানজট ও পরিবেশের ক্ষতি কমানোর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে বছরে ১২৩ মিলিয়ন ডলারের সুফল যোগ করতে পারত, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১,১৪০ কোটি টাকা।
প্রকল্পটির মেয়াদ এখন ২০২৪ সাল ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। আট বছর বিলম্বের ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতি প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে, যা দিয়ে এ ধরনের দুটি বিআরটি করিডর নির্মাণ করা যাবে।
রাজধানী ও শিল্পনগরীর মধ্যে দ্রুত পরিবহনের জন্য নেওয়া এ প্রকল্প রাস্তার জায়গা কমিয়ে দিয়ে এবং পরিবেশ দূষিত করে যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের সময় যেমন নষ্ট করছে, তেমনি পরিবেশও দূষণ করছে।
মানুষের ভোগান্তি এবং গাজীপুরে অবস্থিত শিল্প প্রতিষ্ঠানে উপকরণ ও উৎপাদিত পণ্যের পরিবহনে বিঘ্ন আর দুর্ঘটনার হিসেব বিবেচনায় নিলে এই নির্মাণ বিলম্বের অর্থনৈতিক ক্ষতি আরও কয়েকগুণ বেশি হতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
এর জন্য তারা দায়ী করছেন সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় দুর্বলতা, ত্রুটিপূর্ণ নকশা, ইউটিলিটি স্থানান্তর ও জমি অধিগ্রহণে জটিলতা, উপকরণ সরবরাহে ঠিকাদারের অনীহা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর উদাসীনতাকে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতায় প্রকল্পের ব্যয় যেমন বেড়ে যায়, সুফল পেতেও বেশি সময় লাগে। বিলম্বে সুফল প্রাপ্তির বিষয়টি আমলে নিলে প্রকল্পে দীর্ঘসূত্রতার প্রকৃত ব্যয় অনেক বেশি।'
তিনি বলেন, শিল্পঘন এলাকা হিসেবে গাজীপুরে উপকরণ ও পণ্য পরিবহনে সড়কের ওপর চাপ তুলনামূলক বেশি। ঢাকা থেকে উত্তরের জেলাগুলোর সঙ্গে যাতায়াতের অন্যতম করিডর হিসেবে এই অংশে যাত্রীদের চাপও বেশি।
'বছরের পর বছর ধরে সড়কটিতে নির্মাণ কাজ চলতে থাকায় শিল্প খাতে উৎপাদনে যেমন সমস্যা হচ্ছে, মানুষের ভোগান্তিও বাড়ছে,' বলেন তিনি।
এই ধরনের ক্ষতির আর্থিক মূল্য তুলে আনা বেশ কঠিন বলেও মন্তব্য করেন এই অর্থনীতিবিদ।