বিয়েবাড়ির অর্থনীতির কারণেই কি বিদ্যুতের এই দশা
ছোটবেলা থেকেই আমরা একটা কথা শুনে আসছি—তাড়াহুড়ার কাজ ভালো না। বাংলাদেশের বেশির ভাগ সরকারি কাজ খুব গদাই লস্করি চালে চললেও কিছু জিনিস যখন ওপর থেকে আসে তখন সবকিছুতেই দেখি বড্ড তাড়াহুড়া। টেকনিক্যাল কাজও পারলে তখন অন্য কেউ করে ফেলতে পারলে ভালো হয়। কিন্তু যার কাজ তাকেই তো করতে দেওয়া উচিত, তাই না? আমাদের দেশের কেনাকাটা বা ক্রয়নীতিতে দেশের ক্ষতি হওয়ার সুযোগ কম, যদি কেউ ভেতর থেকে কাজ না করে দেয়। আর বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ইনডেমনিটি, সেই সন্দেহকেই আসলে উসকে দেয়।
আমাদের এই তাড়াহুড়ার উন্নয়নের একটা উদাহরণ—বিদ্যুৎ খাত। জাপানের সহায়তায় আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে মহাপরিকল্পনা করা হয়েছিল, তার প্রথম ভিত্তি ছিল বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লে শিল্প খাতের প্রসার ঘটবে। আর বাসাবাড়ির চাহিদা তো বাড়বেই। হিসাবে নেওয়া হলেও আসলে খুব বেশি পাত্তা পায়নি জ্বালানি নিরাপত্তা এবং জ্বালানির দামের ওঠানামা।
কিন্তু ব্যাংক থেকে ঠিকই ঋণ নেওয়া হয়েছে, কিন্তু সেই ঋণে খুব বেশি শিল্প গড়ে ওঠেনি। দিন দিন ব্যাংকে ঋণ বাড়লেও সেই টাকা গেছে ‘উন্নয়ন’ নামের বড় বড় প্রকল্পের অথবা বিদেশে ‘সেকেন্ড হোমে’। আমাদের এই বিদ্যুতের ভালো অবস্থা বাসাবাড়ির মানুষদের আরাম দিয়েছে, আউটসোর্সিংয়েরও প্রসার হয়েছে। কিন্তু মূল লক্ষ্য পূরণ হয়নি। এদিকে ঘোড়ার আগে গাড়ি কিনে ভরিয়ে ফেলার মতো যে যেভাবে পেরেছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমতি নিয়েছে। নেবেই–বা না কেন? বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে আছে ক্যাপাসিটি বিল। চলুক না–চলুক টাকা দিতে হবেই। ফলে লাভে লাভ। এখনো পাইপলাইনে নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্র বা অনুমতি গ্রহণের পর্যায়ে থাকা বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে।
এখানে কারও তো বলা দরকার ছিল যে ইন্ডাস্ট্রি হচ্ছে না, থামেন। কেউ বলার ছিল না। যদি এসব টাকা পাচার না হয়ে ইন্ডাস্ট্রি বানানো যেত, তাহলে আজ এত কথা উঠত না, দেশের চাকরিবাজারও থাকত স্থিতিশীল। বাড়তি বিদ্যুৎকেন্দ্র পাগলের মতো বানিয়েই যাওয়া হচ্ছে, কিন্তু জ্বালানি নিরাপত্তা থেকে গেছে বিবেচনার বাইরে। আমাদের দেশ নিয়ে বলা হতো, গ্যাসের ওপর ভাসছে। কিন্তু গ্যাস খোঁজার কাজ স্থবির করে চলে যাওয়া হলো এলএনজি, ফারনেস এবং কয়লাভিত্তিক জ্বালানিতে।